
ওয়াকফ সংশোধিত আইন নিয়ে অশান্ত মুর্শিদাবাদ-সহ রাজ্যের একাধিক জেলা। অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদে নিহত হয়েছেন দুই পরিবারের তিনজন। এবার নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, যাঁদের বাড়িঘর, দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানান তিনি। অন্যদিকে, রাজ্যের মানুষদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে দিল্লি গিয়ে আন্দোলনের কথা জানান তিনি।
সম্প্রতি ওয়াকফ সংশোধিত আইনের প্রতিবাদের বিক্ষোভ হয়েছে মুর্শিদাবাদ ও মালদার বেশ কিছু এলাকায়। পরিস্থিতি কিছু ক্ষেত্রে এতটাই উত্তপ্ত হয়ে পড়ে যে, মুর্শিদাবাদের কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষে প্রাণহানিও ঘটেছে। অশান্তি ছড়িয়েছে সুতি, জঙ্গিপুর, সামসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান এবং ফারাক্কায়। আক্রান্ত হয়েছেন অনেকেই। প্রাণহানি ঘটেছে তিন জনের। অশান্তির জেরে ঘর ছাড়া বহু। পুলিশ-প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর কাজ শুরু করেছে।
এই আবহে বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের সমাবেশে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে মুর্শিদাবাদ ও মালদাতে অশান্ত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অশান্তির ঘটনায় দুই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে”। পাশাপাশি যাঁদের বাড়িঘর নষ্ট হয়েছে তাঁদের জন্যেও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরি করে দেবে সরকার”। মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন, দোকানপাট কার কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার।
অন্যদিকে, এদিনের বৈঠকে ইমাম-মোয়াজ্জিমদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, "সরকারের নথি অনুযায়ী রাজ্যে ৪০,৪৮৯ জন ইমাম রয়েছেন। মোয়াজ্জিমের সংখ্যা ২৮,০০০। আপনাদের হাতজোড় করে বলছি, কেউ অশান্তি করতে চাইলে আপনারা নিয়ন্ত্রণ করুন। অশান্তি করতে দেবেন না। ধর্মীয় জায়গা থেকে আপনারা শান্তির আবেদন জানান”।
মমতা বলেন, ‘‘এটা আমার ব্যক্তিগত আবেদন। চেয়ারের আবেদনও বলতে পারেন”। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা সংবিধান রক্ষার আন্দোলন করুন”। তড়িঘড়ি ওয়াকফ সংশোধনী আইন তৈরি করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘এত তাড়াহুড়োর কী ছিল?’’
তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় আন্দোলন করলে হবে না। আন্দোলন করতে হলে দিল্লিতে যান। ট্রেনে যান। প্লেনে যান। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চান। রাস্তায় থাকুন। ময়দানে থাকুন”। এমনকি, দিল্লিতে আন্দোলন করলে তৃণমূল সাংসদরা পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দেন মমতা।
মমতা বলেন, ‘‘রামনবমীতে ওদের (বিজেপি) পরিকল্পনা ছিল অশান্তি করার। কিন্তু আপনারা তা ভেস্তে দিয়েছিলেন। সঙ্কটের সময়ে ঠান্ডা থাকুন, সংযত থাকুন। আপনারা উত্তেজিত হলে আপনারা হারবেন। শান্ত থাকলে জিতবেন”। আইন এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সংবিধান সংশোধন না করে বিল পাশ করে সংশোধনী আইন করা বিজেপির চালাকি। সংবিধান সংশোধন করতে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা লাগে। তা নেই বলেই এ ভাবে করেছে”।
এরপরেই ভাঙড়ের বিক্ষোভ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভাঙড়ে ও সব করার প্রয়োজন ছিল না। সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে। কেউ কেউ নিজের আইডেন্টিটি (পরিচয়) তৈরি করার জন্য রাজনৈতিক ভাবে এগুলো করছে”। পুরো পরিস্থিতির সাপেক্ষে ‘ভুয়ো খবর’ থেকেও সতর্ক থাকতে আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের পুরনো ছবিকে বাংলার বলে চালানো হচ্ছে। বিজেপি এটা করছে। ফেকের যুগ চলছে। ফেককে আপনারা বিজেপির কেক হতে দেবেন না”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন