
এক গবেষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে ফের উত্তাল হল কলকাতা। গত সোমবার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব সায়েন্টিফিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর ল্যাবে ওই গবেষকের মৃতদেহ মেলার পর থেকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন তাঁর পরিবার ও সহপাঠীরা। তাঁদের মাধ্যমে জানা গিয়েছে, এই গবেষক শুভদীপ রায় মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন তাঁর গবেষণা নিয়ে। অভিযোগ, গবেষণা শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা তিনি পাননি তাঁর গাইডের কাছ থেকে। তাই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। যে আত্মঘাতী নোট পাওয়া গিয়েছে, তাতেও সে কথা লিখে গিয়েছেন তিনি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে ক্যাম্পাসে মোমবাতি ও মোবাইল টর্চ জ্বেলে মিছিল হয়। বুধবার অ্যাডমিন, রিসার্চ কমপ্লেক্স, লেকচার হল বন্ধ রেখে অবস্থান বিক্ষোভ করেন প্রতিবাদী পড়ুয়ারা। শুভদীপের বন্ধু ও জুনিয়ররা জানিয়েছেন, রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত ল্যাবে ছিলেন তিনি। পরদিন বেলা ১১টার সময়েও ল্যাবের দরজা বন্ধ দেখেন তাঁরা। তারপর তাঁরা ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পড়েন। ঘরে ঢুকে হতবাক হয়ে যান। দেখেন, মুখে প্লাস্টিক জড়ানো অবস্থায় পড়ে আছেন শুভদীপ।
সহপাঠীরা মনে করছেন, শুভদীপ প্রথমে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস তৈরি করে তা প্লাস্টিক প্যাকেটে ভরে তারপর শ্বাস নিয়েছেন। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। ওইদিনই মৃতদেহের অটোপসি হয়। মঙ্গলবার কল্যাণী পুলিশ মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
আইসার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে আইসার কলকাতায় ফিজিক্যাল সায়েন্সে ইন্টিগ্রেটেড পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হন শুভদীপ। ২০১৫ থেকে তিনি এক অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু সেই অধ্যাপক তাঁকে গবেষণার কাজে প্রয়োজনে সাহায্য করতেন না। এমনই অভিযোগ তাঁর পরিবার ও সহপাঠীদের একাংশের।
বাধ্য হয়ে শুভদীপ নিজেই পেপার লিখে প্রকাশ করতেন। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি যথেষ্ট মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন। শুভদীপের মা রঞ্জনা রায় মঙ্গলবার দুপুরেই হরিণঘাটা থানার মোহনপুর তদন্ত কেন্দ্রে ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন