'জুতো মেরে শান্তি পেয়েছি ...' - অকপট স্বীকারোক্তি শুভ্রা ঘোড়ুই-এর, কী ছিল তাঁর অভিসন্ধি?

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে যখন চেক-আপের পর গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, ঠিক তখনই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে নিজের জুতো ছুঁড়ে মারেন শুভ্রাদেবী।
শুভ্রা ঘোড়ুই, পার্থ চট্টোপাধ্যায়
শুভ্রা ঘোড়ুই, পার্থ চট্টোপাধ্যায়গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

রাজ্যের এস.এস.সি (SSC) দুর্নীতি নিয়ে জলঘোলা শুরু হয়েছে মাসখানেক ধরে। এখনও কোনও সুরাহা হয়নি সেই তদন্তের। প্রতিনিয়তই উঠে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। মিলছে কোটি কোটি টাকার হদিশ। এসবের মধ্যেই এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ হল মঙ্গলবার (২ আগস্ট)। একজন সাধারণ গৃহবধূর রোষের মুখে পড়লেন গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) জোকার ই.এস.আই হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে যখন গাড়িতে উঠতে যাবেন ঠিক তখনই তাঁর দিকে উড়ে এল জুতো। এই ঘটনার পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাসপাতাল চত্বরে। আপাতত এই নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।

আজ জোকার ই.এস.আই হাসপাতালে এসেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার বাসিন্দা শুভ্রা ঘোড়ুই। হাসপাতালে এসে পুলিশি ঘেরাটপে পার্থকে দেখে জুতো ছুড়ে মারেন আমতলার ওই মহিলা। সাথে সাথেই তিনি উঠে আসেন আলোচনার কেন্দ্রে। ঘটনার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শুভ্রা। পার্থর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সংবাদমাধ্যমের সামনেও।

যদিও ওই মহিলার সাথে SSC দুর্নীতি, চাকরি বঞ্চনা এসবের কোন সম্পর্ক নেই। তাহলে এমন কাজ করলেন কেন তিনি? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শুভ্রা নিজেই। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি অকপটে বলেন, হাসপাতালের আউটডোরে চেক-আপ করাতে এসেছিলেন। চেক-আপ হয়ে যাবার পর ওষুধ নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখানেই ভিড়ের মধ্যে কানাঘুষোই শুনতে পান যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন চটি ছুঁড়ে মারবেন পার্থকে।

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। পার্থকে যখন চেক-আপের পর গাড়িতে তলা হচ্ছিল, ঠিক তখনই অভিযুক্ত মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে নিজের চটি ছুঁড়ে মারেন শুভ্রাদেবী। এই ঘটনার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া, “যখন টিভিতে দেখেছিলাম, এত এত টাকা উদ্ধার হচ্ছে, তখন খুব রাগ হয়েছিল। এত লোকের টাকা মেরে, চাকরি মেরে ওরা এত ফ্ল্যাট, বাড়ি করেছে! মনে মনে ভেবেছিলাম, ওই লোকটাকে হাতের কাছে পেলে জুতোপেটা করব। আজ এই খবরটা শুনে সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি।” তিনি আরও বলেছেন, “আমার রাগ ছিল। এই রাগ আমার একার নয় গোটা বাংলার মানুষের। জুতো মেরে শান্তি পেয়েছি। তবে জুতোটা টাকে লাগলে ভাল লাগত।”

শুভ্রা ঘোড়ুইের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা এলাকায়। সেখান থেকে জোকা ই.এস.আই হাসপাতালের দূরত্ব বেশি নয়। ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় শুভ্রাদেবীর। তাঁর স্বামী স্থানীয় প্লাইউড কারখানায় কাজ করেন। দম্পতির এক মেয়ে আছে, যে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করছে। শুভ্রাদেবীর এক প্রতিবেশী জানান, উনি খুব কম বাড়ির বাইরে যান। রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই তাঁদের পরিবারের। কারও সঙ্গে কখনও তাঁকে ঝগড়া করতে বা রেগে যেতেও দেখা যায়নি তাঁকে। হাতে ব্যথা ছিল ওঁর। ওষুধের জন্য গিয়েছিলেন হাসপাতালে। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাগ চেপে না রাখতে পেরেই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন আমতলার শুভ্রা ঘোড়ুই।

রাজ্যের উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে এহেন প্রতিবাদ সত্যিই ‘যজ্ঞে ঘি ঢালা’র কাজ করেছে। যে জুতো ছুঁড়ে তিনি নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, তা ফিরিয়েও নেননি উল্টে খালি পায়েই হাঁটা দিয়েছেন বাড়ির পথে।

শুভ্রা ঘোড়ুই, পার্থ চট্টোপাধ্যায়
SSC Corruption: ইডির নজরদারিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সাথে যুক্ত আরও একটি নির্মাণ সংস্থা

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in