
হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার পর যাদবপুরকাণ্ডে অবশেষে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল। আহত ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে যাদবপুর থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। এফআইআরে ব্রাত্য বসুর গাড়ির চালকের নামও রয়েছে। জানা গেছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার অধীনে খুনের চেষ্টার অভিযোগ, শ্লীলতাহানি সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ১ মার্চ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এসএফআই, আইসা, ডিএসএফ (ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ফ্রন্ট) –এর সদস্যরা। অভিযোগ, বিক্ষোভ দেখানোর সময় পড়ুয়াদের উপর দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সময় গাড়িতেই ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এই ঘটনায় চোখে গুরুতর চোট পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ইন্দ্রানুজ রায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁর চোখ বাদ যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে ইন্দ্রানুজ বলেন, 'আমরা গাড়ির সামনে বসে বললাম, স্যর দাঁড়ান আমরা কথা বলব। কিন্তু ওই অবস্থাতেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এগনো শুরু করে এবং পিকআপ বাড়তে থাকে। তখন আমরা যেহেতু সরতে পারছিলাম না, পিছন দিকে দৌড় শুরু করি… ছিটকে পড়ি। মাথাটা যাতে চাকাতে না যায়, আমি মাথাটা ঘুরিয়ে নিই, এবং তাতেই চোখের উপর দিয়ে চাকাটা চলে যায়।'
ঘটনার পর ইন্দ্রানুজ যাদবপুর থানার দ্বারস্থ হলেও পুলিশ অভিযোগ নেয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। এই নিয়ে বুধবার পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, “রাষ্ট্রকে রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের উচিত অভিভাবকের মতো আচরণ করা।”
যদিও শাসক দলের নেতারা এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আহত ছাত্রের আঘাতের ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যুব তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য।
অন্যদিকে এই যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও উত্তেজনার পারদ চড়ছে। যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে এসএফআই-এর ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের দিন মেদিনীপুর কলেজে আন্দোলনকারী ছাত্রীদের নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, AIDSO সংগঠনের চার ছাত্রীকে মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার লকআপের মধ্যে নিয়ে নৃশংস অত্যাচার করেন ওসি-সহ পাঁচ জন পুলিশ কর্মী। লাগাতার লাথি, কিল, চড়, ঘুষি মারা হয়। কোমরের বেল্ট খুলে তা দিয়েও মারেন ওসি।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা ও থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন নিগৃহীতারা। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। সোমবার এই মামলার শুনানি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন