অন্য কোনও সরকারি চাকরি নয়। তিনি শিক্ষকতাই করতে চান। তিনি বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা সোমা দাস। তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতি নিজেই ডেকেছিলেন সোমাকে। গত কয়েক মাস ধরে বাকিদের সঙ্গে কলকাতার রাজপথে আন্দোলনে শামিল রয়েছেন সোমা।
এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কী বললেন? সামনে তখন আন্দোলনকারী সোমা। বিচারপতি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি অন্য কোনও সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক কিনা? সরাসরি ‘না’ বলেন তিনি। তা শুনে বিচারপতি কেবল বললেন, ‘আদালত আপনাকে মনে রাখবে। শিক্ষকতার সরকারি চাকরির কোনও সুযোগ তৈরি হলে, আপনাকে খবর দেব।’ ধীর পায়ে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন সোমা।
কিন্তু কেন সোমাকে আলাদা করে ডেকে এই প্রস্তাব দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়? বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে কখনও মেট্রো চ্যানেল, কখনও গান্ধী মূর্তির পাদদেশ, কখনও কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে এসএসসি-তে নিয়োগের দাবিতে ধর্নায় বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন দূরারোগ্য ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েও শিক্ষকতার স্বপ্ন দেখা সোমাও।
প্রসঙ্গত, স্কুল সার্ভিস কমিশনের স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পেয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে আন্দোলন করছেন হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তিন দফায় ৩৯৪ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়েছেন নবম-দশম শ্রেণির সহকারী শিক্ষক পদের চাকরিপ্রার্থীরা। এসএসসির দুর্নীতির অভিযোগে নিয়োগ মামলা পৌঁছেছে হাইকোর্টে। চলছে শুনানি। এই পরিস্থিতিতেও নিয়োগপ্রার্থীরা আন্দোলন জারি রেখেছেন। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেও সোমা দাবি আদায়ে রাত জাগছেন কলকাতার রাজপথে। খবর পেয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ডেকে পাঠান তাঁকে।
সেই মতো বুধবার বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে এজলাসে গিয়েছিলেন সোমা। সেখানেই সবটা শুনে বিচারপতি তাঁকে কোনও একটি সরকারি চাকরির প্রস্তাব দেন। বিচারপতির প্রস্তাব একেবারেই নাকচ করে দেন সোমা।
এজলাস থেকে বেরিয়ে বাংলায় স্নাতক সোমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আমার প্রতি সমব্যথী। তিনি অন্য কোনও দফতরে একটি চাকরি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যোগ্যতার লড়াই লড়ছি। উনি চাকরিটা নিলে, সবই হত হয়তো। কিন্তু আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হত না। আমি সব হারিয়েছি, এটা হারাতে চাই না। উনি আমাদের হয়ে লড়ছেন, আমাদের লড়াই লড়ছেন। তাই আমি চাকরিটা নিয়ে সরে যেতে চাই না। আমি চাকরিটা না নিয়ে সম্মানের সঙ্গেই ওঁকে এটাই বোঝাতে চাই, স্যর আমি আপনার পাশে আছি। চাকরি হলে সবার হবে, একসঙ্গে হবে। আলাদা করে আমি চাকরিটা নিয়ে হকের লড়াই থেকে সরে যেতে চাই না।'
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।