"আমি খুশি নই" - নিজে চাকরি পেয়েও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য দুঃখপ্রকাশ ক্যান্সার আক্রান্ত সোমার

"আমরা যাঁরা প্রায় ৪৫০ দিন ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি, তাঁদের সবাইকে চাকরি দেওয়া হলে খুশি হতাম।" - মন্তব্য সোমা দাসের
সোমা দাস
সোমা দাসগ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসকে স্কুল শিক্ষিকার পদে নিয়োগ করল স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। বীরভূম জেলার বাসিন্দা সোমা দাসকে তাঁর নিজস্ব জেলাতেই নলহাটি-১ ব্লকের অন্তর্গত মধুরা হাই স্কুলে বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে চাকরি পেয়েও খুশি নন সোমা। কিন্তু কেন?

সোমার বক্তব্য, "আমি খুশি নই। বিশ্বাস করুন, একেবারে খুশি নই। আমরা যাঁরা প্রায় ৪৫০ দিন ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি, তাঁদের সবাইকে চাকরি দেওয়া হলে খুশি হতাম।"

নিজে চাকরি পেলেও বাকি চাকরিপ্রার্থীরা যাতে দ্রুত চাকরি পান তার জন্য লড়াই জারি রাখার আশ্বাস দিয়ে সোমা বলেন, "আমাদের চাকরি চুরি করে অন্যদের দেওয়া হয়েছে। এই চাকরি তো আমাদের প্রাপ্য ছিল! আমি সত্যি না মিথ্যা বলছি, এসএসসি-র চেয়ারম্যান বলতে পারবেন। তালিকায় আমার নাম আগে থাকা সত্ত্বেও অন্যকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলাম। আমার পাশে তখন কেউ ছিল না। শান্তি পেয়েছিলাম এই আন্দোলনের মঞ্চে এসে। এঁরা লড়াইয়ের সাথী ছিলেন। আন্দোলনরত সকলের চাকরি হলে খুব খুশি হতাম।"

২০১৬ সালে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিয়েছিলেন সোমা দাস। কিন্তু মেধাতালিকায় নাম থাকা স্বত্ত্বেও চাকরি মেলেনি তাঁর। সোমা ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল স্কুল শিক্ষিকা হওয়া। যার ফলে ক্যান্সারের মত কঠিন অসুখের কাছেও হার মানেননি তিনি। রাজ্যে SSC নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের করা একের পর এক মামলায় সাথ দিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে সোমার আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, "আমরা খুব খুশি। আমার মক্কেলকে চাকরি দেওয়ার জন্য আদালত ও রাজ্যের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। রাজ্যের কাছে অনুরোধ করছি স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়োগ করে এই রকম হাজারো সোমার মুখে হাসি ফোটাক।"

কঠিন শারীরিক ব্যধির পাশাপাশি রোদ-ঝড়-জল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে ২০১৯ সাল থেকে দিনের পর দিন প্রতিটি চাকরি প্রার্থীদের সাথে সোমা কখনও বসেছেন ধর্ণায় আবার কখনও সামিল হয়েছে বিক্ষোভ আন্দোলনে। লাগাতার আন্দোলনের ফলে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁর মানসিক জোরকে কাবু করতে পারেনি ব্লাড ক্যানসারের মত কঠিন ব্যাধি। সুস্থ হয়েই তিনি পুনরায় ফিরেছেন বিক্ষোভস্থলে।

সোমার চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গেছে। গত ১৩ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সোমাকে স্কুল শিক্ষিকার জায়গায় অন্য কোনো সরকারি চাকরির প্রস্তাব দিতে চাইলে সোমা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন তিনি স্কুল শিক্ষকতাই করতে চান। এরপর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ভবিষ্যতে যদি কোনো সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার জন্য শূন্যপদ থাকে তবে তা সোমাকেই দেওয়া হবে। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হল সোমার।

সোমা দাস
SSC: এই লড়াই দুর্নীতির বিরুদ্ধে - অন্য চাকরির প্রস্তাব ফেরালেন ক্যান্সার যোদ্ধা আন্দোলনকারী

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in