বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের চড়ছে রাজনৈতিক পারদ। তৃণমূল ও বিজেপি-কে নিয়ে বহুদিন ধরেই ‘সেটিং তত্ত্ব’র অভিযোগ তুলে এসেছে সিপিআইএম ও কংগ্রেস। এবার সেই বিতর্কে ঘি ঢাললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
সম্প্রতি এক সাংবাদিক বৈঠকে শমীক বলেন, “আমরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জন্ম দিয়েছি।” মন্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠলে তিনি আরও স্পষ্ট করেন, “আমরা জন্ম দিইনি, তবে জন্মের সময় উপস্থিত ছিলাম। কংগ্রেসের প্রবল গর্ভযন্ত্রণা থেকে যে নতুন দল তৈরি হয়েছিল, সেই সময় লেবার রুমে অটলবিহারি বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবানী না থাকলে তৃণমূলের জন্ম সম্ভব ছিল না।”
এই বক্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে শাসক শিবির থেকে। তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন, “এসব নিছক কথার জাগলারি। তৃণমূল আজ বাংলায় প্রতিষ্ঠিত। বিজেপি দুর্বল এবং ব্যর্থ বলেই কথার আড়ালে নিজেদের হতাশা ঢাকতে চাইছে। বিজেপির যে ভোট আছে, তা সিপিএমের দেওয়া, তৃণমূলের ভোট একটুও কমেনি।”
বামেরাও আক্রমণ করতে ছাড়েনি। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম পাল্টা বলেন, “অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল তৃণমূলের জন্মদাতা কে। অন্তত এখন একটা নাম পাওয়া গেল। আমরা তো বার বার বলেছি, তৃণমূলের জন্মদাতা আরএসএস। এখন আবার দেখা যাচ্ছে বিজেপিও স্বীকার করছে। বাংলার রাজনীতিতে বিজেপি-তৃণমূল আসলে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দু’টোর বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই চলবে।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্য নিছক তাৎক্ষণিক নয়। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এই মন্তব্যে রাজনৈতিক জল আরও ঘোলা হওয়ারই সম্ভাবনা।
প্রসঙ্গত, কংগ্রেস ছেড়ে ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দল গঠনের প্রথম কয়েক বছরেই বিজেপির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নজর কেড়েছিল। বাজপেয়ী সরকারের আমলে তিনি ছিলেন রেলমন্ত্রী, পরে কয়লামন্ত্রীর দায়িত্বও সামলান। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোট পর্যন্ত এনডিএ-র শরিক ছিল তৃণমূল। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ২০১১ সালে বামেদের সরিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল।
কিন্তু গত এক দশকে রাজ্যের রাজনীতির সমীকরণ অনেকটাই পাল্টেছে। বামের আসন সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেয়ে কার্যত প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বিজেপি রাজ্যে শক্তি বাড়িয়েছে ধাপে ধাপে। এই প্রেক্ষিতেই শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হল।
বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দানে এখন প্রশ্ন—বিজেপি সভাপতির বক্তব্য কি নিছক কৌশল, নাকি সত্যিই দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের ইঙ্গিতবাহী? আপাতত এই এক মন্তব্যই নতুন করে আলোড়ন তুলেছে বঙ্গ রাজনীতির অন্দরমহলে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন