
আলিপুর চিড়িয়াখানার জমি বিক্রি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে, গত কয়েক বছরে উধাও হয়েছে চিড়িয়াখানার বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এই সমস্ত কিছুর প্রতিবাদে সভা করলো সেভ ওয়াইন্ড অ্যানিম্যালস অব আলিপুর জু ম্যান্ড আওয়ার নেচার (স্বজন)। আলিপুর চিড়িয়াখানা, প্রাণীকুল ও বাস্তুতন্ত্র বাঁচানোর দাবি তুলেছে তাঁরা।
বুধবার ভারত সভা হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক কনভেশনে আলিপুর চিড়িয়াখানার জমি বিক্রি বন্ধ করা ও প্রাণীদের উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন দীপঙ্কর সিনহা, ড. মহালয়া চ্যাট্টার্জি, ড. বহ্নি চক্রবর্তী, বর্ণালী চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের প্রাক্তন আধিকারিক জহর সরকার, পরিবেশবিদ সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ প্রমুখরা।
আলিপুর চিড়িয়াখানার জমি বিক্রি এবং পশু উধাও প্রসঙ্গে এদিন নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ চন্দ্রকার দীপঙ্কর সিনহা বলেন, "কলকাতাকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। মনে রাখতে হবে সরকারের নয়, মানুষের জমিতে চিড়িয়াখানাটি রয়েছে। সেই জমি বিক্রি করার অধিকার সরকারকে কে দিয়েছে? চিড়িয়াখানা তো এক গবেষণা কেন্দ্রও বটে। তাহলে কি গবেষণা বন্ধ থাকবে?"
তিনি আরও বলেন, "চিড়িয়াখানার যে অংশ হিডকোর হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই অংশ তো মূল চিড়িয়াখানা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সেখানে রয়েছে প্রাণী রেসকিউ সেন্টার সহ আরও অনেক কিছু। এগুলি না থাকলে চিড়িয়াখানার অস্তিত্বই থাকে না। উপরন্তু গত কয়েক বছর ধরে চিড়িয়াখানা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি। সরকার এক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না"।
পরিসংখ্যান তুলে জহর সরকার বলেন, "১৯৯৬ সালে চিড়িয়াখানায় যেখানে ১,৮৭২টি প্রাণী ছিল, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩৫১টিতে। ২০২৩-২৪ বর্ষেও এই সংখ্যা ছিল ৬৭২। এতগুলি প্রাণী কোথায় গেল? প্রাণী মারা গেলেও তার রেকর্ড থাকবে। এছাড়াও অভিযোগ, চিড়িয়াখানার বড়ো পশুদের তালিকাই নেই। তাহলে হয় বিশাল গাফিলতি হয়েছে, আর না হয় কারচুপি চলেছে। আসলে সরকার মানুষের সম্পত্তির ভাগীদার হয় না, ঠিকেদার বা চৌকিদার হয়। সম্পত্তি হয় জনগণের। সেই সম্পত্তি সরকার কিভাবে বিক্রি করে?"
চিড়িয়াখানার সম্পত্তি বিক্রি ও পশুপাখি উধাও হওয়ার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে মহালয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন, "পশুপাখি কমে গেলে চিড়িয়াখানাকে রুগ্ন ঘোষণা করা সম্ভব হবে, তাহলে আরও বেশি করে চিড়িয়াখানার জমি বিক্রি সম্ভব হবে। এই অসৎ লক্ষ্য নিয়েই কি চলেছে রাজ্য সরকার?"
তিনি আরও বলেন, "এমনিতেই চিড়িয়াখানার আগের সেই বিশালতা ও ব্যাপ্তি এখন নেই। জলাশয় ও খোলা জমি যা আছে, তা মোট জায়গার ৪৮ শতাংশ। এইসব বিক্রি হয়ে গেলে আরও ছোট হয়ে যাবে চিড়িয়াখানার পরিধি। পরিযায়ী পাখিরা এখনও আসে, তারা আর আসবে না। ফলে ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হবে কলকাতার পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, রামব্রক্ষ্ম সান্যালের যাবতীয় গবেষণা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এই প্রতিবাদ আমরা চালিয়ে যাব, ক্রমে তা আরও জোরালো হবে"।
উল্লেখ্য, ১৮২৯ সালে লন্ডন প্রাণিশালার অনুপ্রেরণায় কলকাতায় একটি গবেষণা ও প্রদর্শনী কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৮৭৫ সালে ডিসেম্বরে উদ্বোধন হয় চিড়িয়াখানা। জানা যায়, মীরজাফর আলির জিরাট ও বেগমবাড়ির জমি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ঘুরে চিড়িয়াখানা কমিটির হাতে আসে। বিশ্বজুড়ে প্রাণিশালাকে মূলত গবেষণা কেন্দ্র, উদ্ধার ও শুশ্রুষা কেন্দ্র হিসেবেই রক্ষা করা হয়। আলিপুরের ক্ষেত্রেও তাই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন