'কাকু'র কাছে ১৫ কোটি চান অভিষেক! চার্জশিটে দাবি CBI-এর, আইনজীবী মারফত পাল্টা বিবৃতি তৃণমূল সাংসদের

People's Reporter: সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের চার্জশিটের ২৮ নম্বর পাতায় সিবিআই উল্লেখ করেছে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু সেই অভিষেক কে, কী তাঁর পরিচয়, সে বিষয়ে চার্জশিটে কোনও কিছু উল্লেখ নেই।
অভিষেক ব্যানার্জি
অভিষেক ব্যানার্জিফাইল চিত্র
Published on

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃতীয় চার্জশিট পেশ করে বিস্ফোরক দাবি করলো সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, 'কালীঘাটের কাকু' ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে ১৫ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন ‘জনৈক’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুজয়কৃষ্ণ মিলে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। ‘জনৈক’ অভিষেকের পাশাপাশি সেই টাকা থেকে ভাগ পাওয়ার কথা ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের। চার্জশিট অনুযায়ী, এই সমস্ত তথ্যই নাকি একটি বৈঠকের অডিও রেকর্ড থেকে জানা গেছে। যদিও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের আইনজীবীর দাবি, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে তাঁর মক্কেলের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে সিবিআই।

বুধবার কলকাতায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ২০১৭ –এর প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে তৃতীয় চার্জশিট পেশ করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের একটি অডিও ক্লিপের কথোকপথনের বৃত্তান্ত জানানো হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৭ সালে ‘কাকু’র বেহালার বাড়িতে গিয়েছিলেন অপর দুই অভিযুক্ত তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় –সহ আরও দু’জন। ওই সময়ের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, কী ভাবে বেআইনি নিয়োগ হত, এই চক্রের মাথা কারা, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ওই অডিও ক্লিপে রয়েছে।

এমনকি কীভাবে তদন্তকারীদের হাতে ওই অডিও ক্লিপ এল, তাও চার্জশিটে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছে সিবিআই। সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৭ সালের ওই দিন কুন্তলের নির্দেশে তাঁর এক কর্মচারি অরবিন্দ রায়বর্মণ গোটা আলোচনার অডিও রেকর্ড করে। পরে সেটা ল্যাপটপে সরিয়ে ফেলা হয়। সেই অডিও ক্লিপ হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবটেরিতে। এছাড়া, সুজয়কৃষ্ণ, কুন্তল এবং শান্তনুর কণ্ঠস্বর পরীক্ষার জন্য দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, সেদিন শান্তনু এবং কুন্তল ছাড়াও কাকুর বাড়িতে আরও দু’জন – অরবিন্দ এবং সুরজিত চন্দ ছিলেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের গোপন জবানবন্দি সংগ্রহ করা হয়েছে।

সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের চার্জশিটের ২৮ নম্বর পাতায় সিবিআই উল্লেখ করেছে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু সেই অভিষেক কে, কী তাঁর পরিচয়, তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, না ব্যবসায়ী, না কি কোনও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, সে বিষয়ে চার্জশিটে কোনও কিছু উল্লেখ নেই। শুধু নামটুকুই রয়েছে। অথচ বাকিদের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন পার্থের ক্ষেত্রে উল্লেখ রয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে, সুজয়কৃষ্ণের পরিচয় রয়েছে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ‘চিফ অপারেটিং অফিসার’ হিসাবে। চার্জশিট অনুযায়ী, শান্তনু এবং সুজয়কৃষ্ণ একই দলের (অর্থাৎ তৃণমূলের) সদস্য ছিলেন।

এছাড়া সিবিআইয়ের চার্জশিটের ১২ নম্বর পাতায় লেখা হয়েছে, সুজয়কৃষ্ণের কাছে বেআইনি নিয়োগের জন্য ১৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন জনৈক অভিষেক। কিন্তু কাকু সেই টাকা দিতে অপারগ, কারণ আগেই প্রার্থীপিছু সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সিবিআই চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, সুজয়কৃষ্ণকে এমনও বলতে শোনা যায়, টাকা না দিতে পারার কথা শুনে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ আটকে দেওয়ার কথা বলেছিলেন অভিষেক। অন্যথায় ওই প্রার্থীদের গ্রেফতার অথবা দূরে কোথাও নিয়োগের হুমকিও দিয়েছিলেন জনৈক অভিষেক।

চার্জশিটে বলা হয়েছ, পার্থর মারফত এই বেআইনি নিয়োগ চালাতেন কুন্তল, শান্তনু এবং সুজয়কৃষ্ণ। অভিষেকের সঙ্গে পার্থর নাকি মনোমালিন্য চলছিল। অডিও ক্লিপ শুনে সিবিআই জানতে পেরেছে সুজয়কৃষ্ণ, শান্তনু এবং কুন্তল মিলে ২০০০ চাকরিপ্রার্থীদের থেকে নিয়োগের নামে আরও ১০০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনাও করেছিলেন। সেই টাকা থেকে পার্থ, মানিক এবং অভিষেককে ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণেরা। বাকি ৪০ কোটি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার ছক কষেছিলেন।

বুধবার সিবিআইয়ের চার্জশিটে অভিষেকের নাম প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর মক্কেলের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে সিবিআই। অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং তিন বারের লোকসভা সাংসদ। সঞ্জয়ের দাবি, তাঁর মক্কেল সিবিআইকে তদন্তে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করছেন। ইডি এবং সিবিআই যখনই তাঁকে তলব করছে, তখনই তিনি উপস্থিত হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রও সরবরাহ করেছেন।

সঞ্জয় বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘মামলার তদন্তকারী সংস্থা ইডি আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট দাখিল করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের কোনও উপাদানের উপস্থিতিও মেলেনি। তার পরেও তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট আমার মক্কেলকে হয়রানির উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু নয়”। তাঁর আরও দাবি, সিবিআই তাদের দাবির ‘সমর্থনযোগ্য’ কোনও নথি বা প্রমাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, অন্যায় ভাবে অভিষেককে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে।

চার্জশিটের বক্তব্য জেনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, “ইডিকে কাজে লাগিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরে একটি রাজনৈতিক শক্তি সিবিআইয়ের দিকে ঝুঁকেছে। স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট চার্জশিটে প্রমাণের স্পষ্ট অভাব থাকা সত্ত্বেও সন্দেহ (অভিষেককে নিয়ে) তৈরি করার একটি মরিয়া প্রচেষ্টা করা হয়েছে”।

এই নিয়ে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে কর্মী সম্মেলনের মঞ্চ থেকে তদন্তকারী সংস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জও করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “২৮ পাতার সিবিআই চার্জশিটে একবার শুধু আমার নাম। বাকি আর কিছু নেই। সিবিআই-র ভয় দেখে ভালো লাগছে। আমাকে সিবিআই আগেও ডেকেছিল। আমাকে ধমকে চমকে ভয় দেখানো যাবে না। আমি অন্য ধাতুতে গড়া। আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে পারলে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যু বরণ করব”।

এই চার্জশিট প্রসঙ্গে সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "এর আগেও বিদেশী বান্ধবীদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া করে টাকা পাচার থেকে কয়লা পাচার, ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তদন্ত করে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি মোদী-শাহের তদন্তকারী এজেন্সি। এখন চার্জশিটে কেবল অভিষেক ব্যানার্জির নাম উল্লেখ বিজেপির দিকে যাওয়ার আমন্ত্রণ পত্র নয় তো? বহু অপরাধীদের কেবল দল বদল করানোর জন্য সিবিআই, ইডি-কে ব্যবহারের নজির তো অজস্র।"

অভিষেক ব্যানার্জি
৫ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০% পর্যন্ত অংশীদারিত্ব বিক্রির পরিকল্পনা কেন্দ্রের, তালিকায় কোন কোন ব্যাঙ্ক?

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in