শিল্পীদের বয়কট ইস্যুতে অভিষেকের দাবি উড়িয়ে নিজের অবস্থানেই অনড় কুণাল, তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত

People's Reporter: আর জি কর কাণ্ডে যে সমস্ত শিল্পীরা রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন, তাঁদের তৃণমূলের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষছব্বি - সংগৃহীত
Published on

আর জি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনের গতি কিছুটা কমলেও, নতুন বছরের শুরুতে সেই নিয়েই বিতর্ক তৈরি হল তৃণমূলের অন্দরে। সৌজন্যে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কুণালের 'বয়কট তত্ত্ব' নিয়ে উল্টো অবস্থানের কথা জানান অভিষেক। পাল্টা কুণাল নিজের অবস্থানেই অনড়। কুণাল এবং অভিষেক বিতর্ক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে শোরগোল।

আর জি কর কাণ্ডে যে সমস্ত শিল্পীরা রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন, তাঁদের তৃণমূলের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার কুণালের সেই দাবিকে উড়িয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই দাবিকে যে তিনি সমর্থন করছেন না, সেটা স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার অভিষেক স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেন, কুণালের কথা দলের বক্তব্য নয়। এদিন তিনি বলেন, ‘পার্টির তরফে কেউ এমন বলেছেন? কোনও নোটিস দেখেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা আমি জেনারেল সেক্রেটারি কিছু বলেছি?’ তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় কাকে দিয়ে গান গাওয়াবে, কখন গাওয়াবে, কে গান গাইবে, আমি জোর করে কারও মাথায় চাপাতে চাই না। আমি কোথা দিয়ে হাঁটব-চলব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা সকলের আছে’।

এদিন অভিষেক প্রকাশ্যেই জানান, বয়কটের তালিকাভুক্ত এক শিল্পীর অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার পরে ওই শিল্পী পরে তাঁকে ফোন করেন। তিনিই মধ্যস্থতা করে শিল্পীর অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করে দেন। অভিষেকের কথায়, ‘যে হেতু উনি (সেই শিল্পী) ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করেছেন, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে মেলা কমিটির সদস্য-সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। কথা বলি। যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি শো (অনুষ্ঠান) করেছেন পরে জানতে পারি’।

আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ১৪ আগষ্ট মধ্যরাতে ‘মেয়েদের রাত দখল’-কে সমর্থন করে অভিষেক জানান, ‘১৪ আগস্ট যাঁরা রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন, কেউ সমর্থন করুক বা না-করুক, আমি সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। আমি আজও একই কথা বলছি। কারও ভাল লাগতে পারে বা খারাপ লাগতে পারে’।

এর জবাবে কুণাল বলেন, ‘কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমি কোনও প্রতিবাদীকে বয়কটের কথা বলিনি। যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন, যাঁরা তৃণমূল কর্মীদের বলেছিলেন ‘চটিচাটা’, যাঁরা বাংলাদেশ মডেলে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যছাড়া করার কথা বলেছিলেন, আমি তাঁদের বয়কট করার কথা বলেছি’।

নিজের বক্তব্যেই অনড় থেকে তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল যা বলেছি, আজও তাই বলছি, আগামিকালও তা-ই বলব। সাধারণ তৃণমূল কর্মীদের ভাবাবেগের জায়গা থেকে আমি যা বলেছি, ঠিক বলেছি’। কুণাল আরও জানান, ‘দলের সর্বময় নেত্রী মমতা’দি। তিনি যদি বলেন, আমি ভুল বলেছি, তা হলে আমি মেনে নেব’।

উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর শিল্পীদের বয়কটের দাবি জানিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, ‘যে শিল্পীরা পরিকল্পিত কুৎসা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকার ও দলকে জঘন্য ভাষায আক্রমণ করেছেন, সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকদের কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন, তাঁদের এই শীতের মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত জলসা বা অনুষ্ঠানে যেন না দেখা যায়। এই শীতে এঁদের বয়কট করা হোক। কোনও তৃণমূল নেতার কোনও বিভ্রান্তি থাকলে উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিন। কর্মী-সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দিন’।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষ
Abhishek Banerjee: 'ভোটের ফলাফলের হিসাবে দলের সাংগাঠনিক রদবদল হবে' - ফের ঘোষণা অভিষেকের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in