
রূপ এবং শারীরিক গঠন হতে হবে বলিউড অভিনেত্রী নোরা ফতেহির মতো। সেই জন্য স্ত্রীকে ঘন্টার পর ঘন্টা শরীরচর্চা করতে বাধ্য করতেন স্বামী। করতে না চাইলে, খেতে দিতেন না স্বামী। এমনকি যৌতুকের জন্যও দিনরাত স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালাতেন স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন। জোরপূর্বক গর্ভপাতেরও অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে, যিনি পেশায় এক সরকারি স্কুলের শিক্ষক। স্বামীর বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলে থানায় মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম শিবম উজ্জ্বল। তিনি গাজিয়াবাদের এক সরকারি স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক। চলতি বছর ৬ মার্চ বিয়ে হয় তাঁর। স্ত্রীর দাবি, বিয়েতে তাঁর পরিবার ৭৬ লক্ষ টাকা খরচ করেছিল। ১৬ লক্ষ টাকার গয়না, ২৪ লক্ষ টাকার স্করপিও গাড়ি এবং নগদ ১০ লক্ষ টাকা যৌতুক হিসেবে স্বামীর পরিবারের হাতে দিয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু তা সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আরও যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
শুধু তাই নয়। স্ত্রীকে যাতে বলিউড অভিনেত্রী নোরা ফতেহির মতো দেখতে লাগে সেজন্য প্রতিদিন তিন ঘন্টা করে ব্যায়াম করতে বাধ্য করতেন শিবম। স্ত্রী রাজি না হলে তাঁকে অভুক্ত রাখতেন দিনের পর দিন। যৌতুকের জন্য চাপ দিতেন। কথায় কথায় কটুক্তি করে বলতেন, তিনি অনায়াসেই এমন কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পারতেন যিনি বলিউড অভিনেত্রীর মতো সুন্দর।
ওই গৃহবধূর আরও অভিযোগ, তাঁর স্বামী অন্য মহিলাদের প্রতি আসক্ত। একাধিক মহিলার সঙ্গ পছন্দ করতেন। মহিলাদের অশ্লীল ছবি, ভিডিও দেখার অভ্যাস রয়েছে তাঁর স্বামীর। বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে সেই সব ভিডিও ছবি দেখতেন তিনি। আসক্ত ছিলেন পর্নো*গ্রাফিতে। নিয়মিত দেখতেন ছবি এবং ভিডিও। স্বামীর এই ব্যবহারে আপত্তি জানালে নির্যাতন করা হত তাঁকে।
মহিলার অভিযোগ, তিনি গর্ভবতী হওয়ার পর শিবম তাঁকে বলেছিলেন, “এখনও তোমাকেই মেনে নিতে পারেনি, সন্তানকে কীভাবে গ্রহণ করব!” অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়েই ভ্রুণ নষ্ট করার ওষুধ খাইয়ে দেন তাঁর স্বামী। এমন কিছু খাবার খাওয়ানো হয় তাঁকে, যার জেরে তাঁর গর্ভপাত হয়। মেয়ের উপর এত অত্যাচার দেখে ১৮ জুন তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান তাঁর বাবা। এরপর ৯ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলে জানা যায় তাঁর গর্ভপাত হয়েছে।
এরপর ২৬ জুলাই শিবমের বাড়িতে ফিরে গেলে, তাঁকে আর ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উলটে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে গালিগালাজ করা হয়। এমনকি গয়না সহ অন্যান্য জিনিস ফেরত দিতেও অস্বীকার করে শ্বশুরবাড়ির লোক। এরপরেই ১৪ আগস্ট স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই গৃহবধূ।
গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে অভিযোগগুলো যেহেতু গুরুতর, তাই কোনও পদক্ষেপ করার আগে বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন