
"ডিএ নিয়ে বৈষম্যের কথা কেন বলছেন?" বুধবার শুনানি চলাকালীন মামলাকারীদের আইনজীবীকে প্রশ্ন করল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের আরও প্রশ্ন, "পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের দিল্লি, চেন্নাইয়ে কী হারে ডিএ দেওয়া হয়?"
সোমবার থেকে ডিএ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্রের বেঞ্চে। বুধবার মামলাকারী, অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীদের বক্তব্য শুনছে শীর্ষ আদালত। এদিন মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম শুনানির শুরুতেই সওয়াল করেন, "নির্দিষ্ট সময়মতো ডিএ দিতে হয়। এটা সরকারের নীতির মধ্যে পড়ে। ইচ্ছা অনুযায়ী ডিএ দেওয়া যায় না"। এরপরে তিনি বলেন, "বেতন কমিশনের সুপারিশ মতো নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ দিতে হবে"।
এদিন দুই বিচারপতির বেঞ্চে শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী জানান, সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে চায় না রাজ্য। সেই প্রসঙ্গে আদালতে তিনি বলেন, রিভাইজ়ড পে অ্যান্ড অ্যালোয়েন্স রুলস, ২০০৯ অনুযায়ী, ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য সরকার ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের বকেয়া ডিএ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থাৎ ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের সময়ের ডিএ বাকি থেকে যায়। যেটা সরকার দিতে চায়নি।
এরপরেই গোপাল জানান, নিয়ম অনুযায়ী ১৯৮২ সালকে ভিত্তিবছর ধরে হিসেবে করা হত। এখন ২০১৬ কে ধরা হয় ভিত্তিবছর। আদালতে তাঁর সওয়াল, ডিএ-র হিসেব করতে হবে এআইসিপিআই অনুযায়ী। এআইসিপিআই হল, একটি সংখ্যা, যা দেখায় কতটা দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। প্রতি মাসে এটি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের শ্রম ব্যুরো।
এরপরেই এই মামলায় বৈষম্য কেন আসছে সেটা জানতে চান বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্র। এমনকি রাজ্যের বাসিন্দাদের দিল্লি, চেন্নাইয়ে কী হারে ডিএ দেওয়া হয়, তাও জানতে চান তিনি। বিচারপতির প্রশ্নের পর মামলাকারীর আইনজীবী জানান, নয়াদিল্লির বঙ্গভবন এবং চেন্নাইয়ের ইউথ হোস্টেলে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এআইপিসিআই-এর নিয়ম মেনেই ডিএ পান সরকারি কর্মচারীরা।
এরপরেই আইনজীবীর ব্যাখ্যা, "সব কর্মচারীর উপরই রিভাইজ়ড পে অ্যান্ড অ্যালোয়েন্স রুলস, ২০০৯ কার্যকর। তাই কাউকে বেশি ডিএ দেওয়া এবং কাউকে কম ডিএ দেওয়া বৈষম্যমূলক। এই বৈষম্য সমতার অধিকার (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪) লঙ্ঘন করে"।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে তিনটি যুক্ত দিয়েছিল রাজ্য। এক, ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। দুই, ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আইনি অধিকার নেই। এবং তিন, রাজ্য অবস্থা বুঝে সব দিক বিবেচনা করে ডিএ দেয়।
এরপরে রাজ্যকে বিচারপতি পিকে মিশ্র প্রশ্ন করেন, “ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআই (কনজ়্যুমার প্রাইস ইনডেক্স) মেনে না-দিলে কোন অঙ্কে ডিএ দিতে চায় রাজ্য?"
এর আগে সোমবার শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছিল, কেন রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) ২৫ শতাংশ সময়মতো দেওয়া হল না!
উলেখ্য, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যের সরকারি কর্মীদের ডিএ বকেয়া রয়েছে। সেই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। গত ১৬ মে শুনানিতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ছিল, ১০ বছরে যে ডিএ বাকি আছে তার ২৫ শতাংশ পরের ছ'সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যকে। ২৭ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ডিএ দেওয়ার বদলে ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্টে ছ'মাসের সময় চেয়ে নেয় রাজ্য। পাশাপাশি আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানায়।
রাজ্যের যুক্তি ছিল, রাজ্যের লক্ষ লক্ষ কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বর্তমানে রাজ্যের কাছে এত পরিমাণ অর্থ নেই। ডিএ দিতে গেলে ঋণ নিতে হবে সরকারকে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। যা সময়সাপেক্ষ। এছাড়া, আরও জানিয়েছিল, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, এটা ঐচ্ছিক বিষয়। তাই কেন্দ্রের হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয় রাজ্য সরকার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন