
‘বেদকে রক্ষা করলে, বেদ আমাদের রক্ষা করবে’ – এমনই মন্তব্য করলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতি জি আর স্বামীনাথন। জাতীয় বৈদিক প্রতিভা সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি। তাঁর দাবি, একটি ঘটনা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
বিচারপতি স্বামীনাথন জানান, তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু, যিনি বৈদিক পণ্ডিত বা 'শাস্ত্রী' ছিলেন, শাস্ত্র ও বেদে সুদক্ষ, তিনি একটি মোটরগাড়ি দুর্ঘটনার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১৮ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন। সেই দুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। সেই সময় তিনি (বিচারপতি) একজন আইনজীবী ছিলেন।
বিচারপতি জানান, তাঁর পণ্ডিত বন্ধু নিজের বোন ও ভাগ্নেকে নিয়ে মন্দির দর্শনে বেরিয়েছিলেন, তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর বোন। একটি চায়ের দোকানের সামনে আচমকা গাড়িটি এক ব্যক্তিকে ধাক্কা দেয় এবং সেই পথচারী নিহত হন। পণ্ডিতের বোন আমেরিকা থেকে ভারতে এসেছিলেন। জরুরি ভিত্তিতে আমেরিকায় ফিরে যেতে হয় তাঁকে। তাই পণ্ডিত সমস্ত দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৮ মাসের কারাদণ্ড দেয়।
বিচারপতি স্বামীনাথন বলেন, “এই ধরনের মামলায় সাধারণত ছয় মাসের সাজা হয়। কিন্তু শাস্ত্রী সম্পূর্ণ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে (ধুতি এবং ঊর্ধ্বাংশে কাপড়) আদালতে আসতেন। পণ্ডিত আমায় বলেছিলেন, পোশাকের কারণেই বিচারক তাঁকে ১৮ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন”।
মামলার কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে বিচারপতি দেখেন, কোনও সাক্ষীই তাঁকে গাড়ি চালাতে দেখেননি। এমনকি কেউ তাঁকে ঘটনাস্থলে শনাক্তও করেননি। মোট আটজন সাক্ষী ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন কিন্তু কেউই পণ্ডিতকে গাড়ির চালক হিসেবে চিহ্নিত করেননি।
এই মামলায় আপিল করেন বিচারপতি স্বামীনাথন নিজে (সেই সময় আইনজীবী ছিলেন তিনি)। শুনানির বিচারক ছিলেন তাঁর সহপাঠী। শেষে আদালত পণ্ডিতকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস করে দেয়।
এই ঘটনার ভিত্তিতে বিচারপতি বলেন, “সেদিন আমি বুঝলাম, যখন আমরা বেদের সেবা করি, বেদও আমাদের রক্ষা করে। তার আগে এই বিষয় নিয়ে আমি গভীরভাবে ভাবিনি।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন