‘ভিবি জি রাম জি’ (VB GRAMG) বিল এনে গ্রামীণ গরীব মানুষের কাজের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমজিএনরেগা (MGNREGA) প্রকল্পের বদলে কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা নতুন প্রকল্পের বিল প্রসঙ্গে আলোচনায় বুধবার একথা বলেছেন শিকরের সিপিআই(এম) সাংসদ অমরা রাম। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে লোকসভায় এই বিল পাশ হয়েছে।
গতকাল বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বামপন্থীরা প্রথম থেকেই দেশ জুড়ে শ্রমিক এবং প্রান্তিক মানুষের নানা দাবি নিয়ে লড়াই করে এসেছে। ২০০৪ সালে বামপন্থীদের সমর্থন নিয়ে যখন প্রথম ইউপিএ সরকার তৈরি হয় তখন গ্রামীণ মানুষের রোজগারের নিশ্চয়তার জন্য ১০০ দিনের কাজ চালু করেছিল। বিজেপি সরকার সেই আইন বাতিল করতে চাইছে।’
বাম সাংসদ আরও বলেন, ‘ওরা ১২৫ দিনের কথা বলছে। কিন্তু এই নতুন আইনের মাধ্যমে গরীবের মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়া হবে। কেরালার বামপন্থী সরকার একমাত্র সরকার যারা এমজিএনরেগা কর্মীদের জন্য আলাদা একটা বোর্ড তৈরি করেছে। তাদের সমস্যার সমাধান করার জন্য। বিজেপি শাসিত একটা রাজ্যেও এই ধরণের কোনও বোর্ড নেই।’
মনরেগার বরাদ্দ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অমরা রাম বলেন, ‘আগে ১০০ দিনের কাজের জন্য এক লক্ষ কুড়ি হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। এখন তা কমে ৬২ হাজার কোটি টাকা মাত্র বরাদ্দ করা হয়েছে। এই সরকার যে গরিব বিরোধী তা এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে।’
গত মঙ্গলবার পেশ করা এই বিল অনুসারে কেন্দ্রীয় আইনে চালু হবে প্রকল্প। যদিও তা একশো দিন কাজের আইন মনরেগার মতো নয়। বেশিরভাগ রাজ্যে মজুরি বাবদ খরচের ৪০ শতাংশ দায়ভার বহন করতে হবে রাজ্যকে। এই বিলের বিরোধীদের বক্তব্য অনুসারে, নাম পাল্টে নতুন ভিবি-জিআরএএমজি-র কাজের আইনি অধিকারের দায়ভার রাজ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলে তা সামাল দেওয়া বহু রাজ্যের পক্ষে সম্ভব হবেনা।
মঙ্গলবার এই বিল পেশ হবার পরেই বিরোধী সাংসদরা প্রবল প্রতিবাদ জানান। সংসদ ভবনের বাইরে বামপন্থী সাংসদ সহ বিরোধী সাংসদরা বিক্ষোভে শামিল হন। প্রস্তাবিত এই বিলে ১২৫ দিন কাজের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য অনুসারে, বর্তমানে জারি থাকা আইন সংশোধন করেই তা করা যেত। কিন্তু তা না করে আগের আইন বদল করে নতুন আইন এনে আসলে গ্রামে কাজের নিশ্চয়তার আইনি অধিকারকে ধ্বংস করতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার।
মঙ্গলবার লোকসভায় এই বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। প্রস্তাব অনুসারে, বিল পাশের ছয় মাসের মধ্যে আইন অনুযায়ী প্রকল্প রূপায়ণ করতে হবে রাজ্যগুলিকে। এতদিন যে দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রের ওপর। বিল পেশের পরেই বিল থেকে মহাত্মা গান্ধীর নাম সরিয়ে দেওয়া এবং মনরেগা আইনের কাঠামোগত বদলের সমালোচনা করেন বিরোধী সাংসদরা।
বিরোধীদের বিক্ষোভের উত্তরে শিবরাজ শিং চৌহান বলেন, সরকার শুধুমাত্র মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ নয়, তাঁর নীতিকেও মান্যতা দেয়। আগের সরকারের তুলনায় মোদী সরকার গ্রামীণ জনজীবনের উন্নয়নের জন্য অনেক বেশি চিন্তা করে।
বর্তমানে চালু এমজিএনরেগা অনুযায়ী মজুরি খরচের গোটাটাই বহন করে কেন্দ্র। রাজ্যকে খরচ করতে হয় জবকার্ড হোল্ডার কাজ না পেলে তার জন্য ভাতা। এছাড়া সামগ্রী সরঞ্জাম বাবদ খরচের ২৫ শতাংশ বইতে হয়, রাজ্যকে। আর রাজ্য স্তরে প্রশাসনিক খরচ করতে হয়। যদিও নতুন আইনে কিছু রাজ্য এবং বিধানসভা না থাকা কিছু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদ দিয়ে মজুরির খরচের ৬০ ভাগ বহন করবে কেন্দ্র এবং রাজ্যকে ৪০ ভাগ বহন করতে হবে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন