সরকার বন্দেমাতরম নিয়ে আলোচনা করছে কারণ সামনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। এইসময় কেন্দ্র চায় মানুষের নজর ঘোরাতে। কেন্দ্রীয় সরকারের যে সমস্ত ব্যর্থতা রয়েছে, তার থেকে সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতে চেয়েই এই আলোচনা। সোমবার লোকসভায় বন্দেমাতরম প্রসঙ্গে বিতর্কে অংশ নিয়ে একথা জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। তিনি আরও বলেন, বন্দেমাতরম দেশের মানুষকে প্রাণ দিয়ে দেশ বাঁচানোর সাহস জুগিয়েছিল।
এদিন লোকসভায় বন্দেমাতরম-এর ১৫০ বছর শীর্ষক বিতর্কে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, “বন্দেমাতরম আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস মনে করায়।” তিনি দাবি করেন, কেন্দ্র তাদের বিরুদ্ধেই আরও অভিযোগ আনতে চায় যারা “দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কারণ তারা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চান না”।
এদিনের বন্দেমাতরম বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে বারবার জওহরলাল নেহেরুর প্রসঙ্গ আসে। সেই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, "যেহেতু আপনি বারবার নেহেরুর কথা বলছেন, চলুন এক কাজ করা যাক। আমরা আলোচনার জন্য একটা সময় বরাদ্দ করি, ‘তাঁর’ বিরুদ্ধে করা সমস্ত অপমানের একটা তালিকা তৈরি করি... বিতর্ক করি এবং এই অধ্যায়টি চিরতরে বন্ধ করে দিই।” “এরপর, আজকের মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বর মত বিষয়গুলি নিয়ে আমরা আলোচনা করি।”
বন্দেমাতরম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৫ সালে গানটির প্রথম দুটি স্তবক লিখেছিলেন। ১৮৮২ সালে তিনি আরও চারটি স্তবক যোগ করেন এবং আনন্দমঠ গ্রন্থে এটি প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৬ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রথমবার এটি পাঠ করেছিলেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে একথা উল্লেখ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে এদিন তিনি বলেন, “মোদী আর আগের মতো প্রধানমন্ত্রী নন, তাঁর আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে; তাঁর নীতি দেশকে দুর্বল করে তুলছে... দেশের মানুষ খুশি নয়, তারা সমস্যায় বন্দী এবং সরকার এসবের কোনও সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না।”
বন্দেমাতরমের ১৫০ বছর উপলক্ষে লোকসভায় এদিন দিনভর আলোচনা চলে। সকালে আলোচনার শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের বক্তব্যে কংগ্রেস এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুকে লাগাতার আক্রমণ করেন তিনি। মোদী বলেন, বন্দেমাতরমের ঐতিহ্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কংগ্রেস বন্দেমাতরমের সাথে আপস করেছে। মুসলিম লীগের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। নেহরু বন্দেমাতরমকে ‘টুকড়ে-টুকড়ে’ করেছিলেন। তাঁর কথায় বন্দেমাতরমকে প্রথমে ভাগ করা হয়েছিল, তারপর দেশ ভাগ করা হয়েছিল।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বলতে উঠে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন করে ইতিহাস লিখতে চাইছেন এবং পুরো বিষয়টিতে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এটা অভ্যেসে পরিণত হয়েছে যে কোনও বিষয়ে বলতে গেলেই প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং কংগ্রেসকে টেনে আনা। অপারেশান সিঁদুর নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়েও তিনি ১০ বার জওহরলাল নেহেরুর নাম আনেন এবং ৫০ বার কংগ্রেসের নাম আনেন। গগৈ বলেন, যদি কোনও রাজনৈতিক দল বন্দেমাতরমকে সম্মান দিয়ে থাকে, শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকে তাহলে তা কংগ্রেস।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন