
ভারতীয় সমাজে মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব একটি ‘গোপন’ ঘটনা হিসেবেই পরিচিত। একবিংশ শতকেও এই নিয়ে সর্বসমক্ষে সেভাবে কেউ কোনও কথা বলেন না। শতাব্দী পর শতাব্দী ধরেই এমনটাই চলে আসছে। তবুও মাঝেমধ্যে অনেকেই সমাজের এই অলিখিত ‘ট্যাবু’ ভাঙার চেষ্টা করেন। এবার সেরকমই এক ছক ভাঙা কাণ্ড ঘটালেন উত্তরাখণ্ডের জিতেন্দ্র ভাট। কেক কেটে আনন্দ অনুষ্ঠান করে ‘উদযাপন’ করলেন মেয়ে রাগিণীর প্রথম ঋতুস্রাব। মেয়ের উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় জিতেন্দ্রর করা ‘হ্যাপি পিরিয়ডস’ পোস্টও ভাইরাল হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের উধম সিং নগরের বাসিন্দা জিতেন্দ্র এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ছোটবেলা থেকে দেখেছি কীভাবে এই সময়ে কিশোরী মেয়ে ও মহিলাদের ‘অপবিত্র’ হিসেবে গণ্য করা হত। কীভাবে তাঁদের থেকে অন্যদের দূরে থাকতে বলা হত, রান্নাঘরে ঢুকতে দেওয়া হত না, কোনও কিছু ছোঁয়াতেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আমি ঠিক করেছিলাম সমাজের এই ভুল ধারণাকে এবং ‘গোপনীয়’ ঘটনাকে প্রকাশ্য উদযাপনে পরিণত করতে হবে।” মেয়ে রাগিণীর প্রথম ঋতুস্রাব উদযাপনের জন্য তাই পেশায় সঙ্গীত শিক্ষক জিতেন্দ্র পার্টি দেন, এমনকি মেয়ের জন্য কেকও আনেন।
জিতেন্দ্র আরও জানিয়েছেন, “আমরা এইধরণের ঘটনাগুলিকে এত গোপন রাখি কেন? প্রজননের ক্ষেত্রে এটি মেয়েদের একটি অতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একে লুকিয়ে না রেখে উদযাপন করা উচিত।”
জিতেন্দ্রর ডাকা এই উদযাপনী আসরে আসা রাগিণীর বন্ধুরা ও অন্যান্য অতিথিরা এই উদ্যোগকে যথেষ্ট অভিবাদন জানিয়েছেন। অতিথিরা অনেকেই রাগিণীর জন্য উপহার হিসেবে চকলেট ও স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে এসেছিলেন। বাবার এই উদ্যোগ নিয়ে রাগিণী জানিয়েছে, “প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত তাঁদের মেয়েদের মাসিকচক্রকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে মেনে নিয়ে এরকম মনে রাখার মতো উদযাপন করা।” তার স্কুলের বন্ধু ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও এইধরণের সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে রাগিণী।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন