
উত্তরপ্রদেশের সীতাপুরে এক সাংবাদিক হত্যার ৩৪ দিনের মাথায় ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে স্থানীয় এক নামকরা মন্দিরের পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করল সীতাপুর পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছে সীতাপুর থানার পুলিশ। পুলিশের দাবি ‘সুপারি কিলার’ ভাড়া করে স্থানীয় মন্দিরের ওই পুরোহিত সাংবাদিক রাঘবেন্দ্র বাজপাইকে হত্যা করিয়েছেন। অভিযুক্ত পুরোহিতের নাম শিবানন্দ বাবা ওরফে বিকাশ রাঠোর।
গতকাল সীতাপুরের এস পি চক্রেশ মিশ্র সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, স্থানীয় মন্দিরের ওই পুরোহিত এক নাবালকের সঙ্গে মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলেই যৌনকর্মে যুক্ত হয়েছিলেন। যে ঘটনার খবর সাংবাদিক রাঘবেন্দ্র বাজপাইর কাছে থাকায় তিনি তা ফাঁস করে দেবেন বলে পুরোহিতকে জানান। এর জেরেই সুপারি কিলার ভাড়া করে তাঁকে হত্যা করান ওই পুরোহিত।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, সীতাপুরের মোহালি অঞ্চলের সাংবাদিক রাঘবেন্দ্রকে হত্যা করার জন্য তিন সুপারি কিলারকে ৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিল ওই পুরোহিত। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুরোহিত সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল আততায়ীর খোঁজে তল্লাশি চলছে।
সীতাপুরের পুলিশ সুপার নিশ্চিত করেছেন যে, পুরোহিতের সমকামী সম্পর্ক এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ই সীতাপুরের মাহোলি এলাকায় হিন্দি দৈনিকের সাংবাদিক রাঘবেন্দ্র বাজপাই (৩৬) হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিকজনের সঙ্গে ধৃত পুরোহিতের সমকামী সম্পর্ক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু অবৈধ কাজকর্মের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ।
চলতি বছরের মার্চ মাসের ৮ তারিখ দৈনিক জাগরণের সাংবাদিক রাঘবেন্দ্র বাজপাইকে লখনৌ-দিল্লি হাইওয়ের হেমপুর ক্রসিং-এর কাছে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর শরীরে একাধিক গুলির ক্ষত ছিল। এই ঘটনার নিন্দা জানায় দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। এমনকি ঘটনার নিন্দা জানিয়েছিলেন ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল অদ্রে অ্যাজুলে।
হত্যাকান্ডের নিন্দা করে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের অপরাধ কখনই মেনে নেওয়া উচিত নয়। কারণ তা করা হলে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে চেয়ে জনসাধারণকে তথ্য প্রদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে বাধা দেওয়ার চেষ্টাকারীদেরই উৎসাহিত করা হয়।
যদিও পুলিশের এই দাবির সঙ্গে সহমত নন নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী রেশমি। তিনি পুলিশের সাংবাদিক সম্মেলনের পর জানিয়েছেন, রাঘবেন্দ্র বাজপাই তাঁর কড়া প্রতিবেদনের জন্য সুনামের অধিকারী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ধান সংগ্রহে অনিয়ম নিয়ে বেশ কিছু তদন্তমূলক প্রতিবেদন লিখেছিলেন। এই হত্যাকান্ডের পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে পুলিশ আমার স্বামীর চরিত্র নিয়ে বদনাম দেবার চেষ্টা করে। এখন তারা অন্য গল্প খাড়া করেছে। আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন