
ভারতে 'এক দেশ, এক ভোট' নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল কেন্দ্রীয় সরকার। বৃহস্পতিবার এই ব্যবস্থা প্রয়োগ নিয়ে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। চলতি শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রের এই নীতির সমালোচনা করছে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা।
লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই 'এক দেশ, এক ভোট' চালু করার জন্য সুর চড়িয়েছিল বিজেপি। বিজেপির দাবি, দেশে একবার নির্বাচন হলে খরচা অনেক কমে যাবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মীদেরও ভোটার তালিকা তৈরির জন্য বার বার কাজ করতে হবে না। এছাড়া একবার নির্বাচন হলে বিভিন্ন রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজগুলি থমকে যাবে না।
সূত্রের খবর, 'এক দেশ, এক ভোট' নিয়ে কোনও রকম অশান্তি চাইছে না কেন্দ্র। বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হতে পারে। সেখানে বিলটি যাচাই করে সংসদে আলোচনা হতে পারে।
গেরুয়া শিবিরের 'এক দেশ, এক ভোট' নীতিকে কটাক্ষ করেছে বামেরা। সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'এক দেশ, এক ভোট নিয়ে আমরা আগেও যা বলেছি এখনও তাই বলছি। সম্পূর্ণ ভুল একটা নীতি গ্রহণ করছে কেন্দ্র সরকার। এই নীতি কার্যকর করা হলে গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর হবে। আমাদের দেশে পাঁচ বছর অন্তর ভোট হয় মানুষের আস্থা-অনাস্থাকে মাথায় রেখেই'।
তৃণমূলের তরফ থেকেও এই কেন্দ্র সরকারের নীতির বিরোধিতা করা হয়েছে। তৃণমূলের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়, এ বছরের জানুয়ারি মাসেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, 'এক দেশ, এক ভোটে'র হাই-লেভেল কমিটির সচিব ডঃ নীতেন চন্দ্রকে একটি বিস্তারিত চিঠি লিখে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এই বিলটি অসাংবিধানিক এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিরোধী, ব্যবস্থাপনা ও গণতন্ত্রের জন্য দুঃস্বপ্ন এবং একতরফা, কর্তৃত্ববাদী এবং জোর করে চাপিয়ে দেওয়া।
আরও জানানো হয়, 'কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গায়ের জোরে এই বিলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি তৈরি থাকুক। সংসদ ভবনে আমাদের সাংসদরা পূর্ণমাত্রায় এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। এই দমনমূলক, অগণতান্ত্রিক আইন কখনই আমাদের দেশে কার্যকরী হতে পারে না'।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে 'এক দেশ এক ভোট' নিয়ে কমিটি গড়েছিল কেন্দ্র। এই কমিটিতে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রাক্তন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং, লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব সুভাষ কাশ্যপ এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে। এই কমিটিতে যোগদানের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেইসময় লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরিকে। কিন্তু ‘এক দেশ এক ভোট’ ত্বত্ত্বটির বিরোধিতা করে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি তিনি।
সেই কমিটিই লোকসভা নির্বাচনের আগে ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মর কাছে আট খন্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্ট জমা দেয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুপ্রিয়া শ্রীনাতে বলেন, ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন-এর বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও খসড়া প্রস্তাব পেশ করা হয়নি। যদিও সূত্র বলছে, কেন্দ্রের সরকার এই মেয়াদেই এক দেশ এক ভোট-এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন