
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। সেই লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। বিভিন্ন দলের সাংসদরা বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশে সফর করে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরবে। সেই দলে তৃণমূলের তরফ থেকে বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের নাম ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এমনকি বিদেশ মন্ত্রক এবং সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর পক্ষ থেকে ইউসুফের সাথে যোগাযোগ করে পাসপোর্ট সংক্রান্ত নথি চেয়ে নেওয়াও হয়। কিন্তু রবিবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে ইউসুফের ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সফরের বিষয়টি নাকচ করে দেওয়া হয়।
এই মর্মে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ ভাবে দেশ এবং জাতীয় স্বার্থের পক্ষে। কিন্তু আন্তর্জাতিক কূটনীতি করাটা কেন্দ্রের কাজ। সেটা তারাই করুক"। দলীয় সূত্রে খবর, কোন প্রতিনিধি দলে কে যাবেন, সেটা বিজেপি বা কেন্দ্র সরকার স্থির করতে পারে না। দল শৃঙ্খলা মেনে চলে। এহেন পরিস্থিতিতে দলনেত্রীর সঙ্গে কথা না বলে বা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি না পাঠিয়ে সাংসদকে ফোন করে পাসপোর্ট চেয়ে নেওয়াটা শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
এমনকি এই নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ইউসুফকে প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করার আগে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। সোমবার দিল্লি যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, "পহেলগাঁও ইস্যুতে কেন্দ্রের সমস্ত পদক্ষেপের পাশে তৃণমূল থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একবিন্দু আলোচনা না করে দলের প্রতিনিধির নাম ঠিক করল বিজেপি? মনে রাখবেন, তৃণমূলই একমাত্র দল, যে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই ইস্যুতে কেন্দ্রকে সবরকম সমর্থন জানিয়েছে স্রেফ জাতীয় সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে"।
অন্যদিকে, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছে শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) এবং কংগ্রেসও। অভিযোগ, আমেরিকার চাপে সংঘর্ষবিরতি হয়ে যাওয়া এবং পহেলগাঁও কাণ্ডের অপরাধীদের ধরতে না পারায় সরকারকে নিয়ে দেশবাসীর মনে যে খেদ তৈরি হয়েছে, তার থেকে নজর ঘোরাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শিবসেনার (উদ্ধব ঠাকরে) প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীকে প্রতিনিধিদলে রাখা নিয়েও সেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এনিয়ে দলের নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, "বরযাত্রী পাঠানোর দরকারই নেই। প্রধানমন্ত্রী দুর্বল। এখন তাড়াহুড়ো করার দরকারই ছিল না। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের পুত্র শ্রীকান্ত গিয়ে বিদেশে কিসের প্রতিনিধিত্ব করবেন? বিজেপির সব কিছু নিয়ে রাজনীতি করা অভ্যাস। ইন্ডিয়া মঞ্চের উচিত, এই বারাত বয়কট করা"। তবে এই প্রতিনিধি দলে প্রিয়াঙ্কা থাকবেন কিনা, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি সঞ্জয়।
অন্যদিকে, সম্প্রতি দলবিরোধী মন্তব্য করার জন্য দলের অন্দরেই ভৎর্সিত হয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। এহেন পরিস্থিতিতে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে বাদ দিয়ে শশী থারুরকে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য করার পিছনে রাজনৈতিক স্বার্থ আছে বলেই মনে করছে কংগ্রেস শিবির। এই আবহে বিতর্ক উস্কে দিয়ে বিজেপি নেতা গৌরব বল্লভ বলেছেন, “আসল প্রতিভাকে কংগ্রেস চাপা দেয়। কংগ্রেস জবাব দিক, কেন তারুরকে এত ঘৃণা? যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর যোগ্যতার কারণে তারুরকে বাছছেন, তখন কংগ্রেসের কী সমস্যা?”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন