

হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ মামলায় আদানিকে ক্লিনচিট দিল ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া)। আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কারচুপির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই, যারা এই মিথ্যা প্রচার চালিয়েছে তাদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে আদানি।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে মার্কিন শেয়ার বিশ্লেষক সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার বাজারে জালিয়াতি এবং প্রতারণা করার অভিযোগ এনেছিল। হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে দাবি করে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শেয়ার বাজারের নিয়ম লঙ্ঘন করে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করেছেন আদানি গোষ্ঠী। স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত তারা। অর্থাৎ কারচুপি করে নিজেদের নথিভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার দর বাড়িয়েছে তারা।
রিপোর্টে স্পষ্টভাবে দাবি করা হয়, সেবির বিধিকে ফাঁকি দিতে ভুঁইফোঁড় বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে নিজেদের সংস্থার শেয়ার কিনিয়েছে তারা। উদ্দেশ্য, অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখা। গত তিন বছরে যে ১০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদ বৃদ্ধি হয়েছে আদানি গ্রুপের, তা এভাবেই ‘স্টক ম্যানিপুলেশন’ করেই হয়েছে। এভাবেই তাদের সম্পদ ৮১৯ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হু হু করে পড়তে থাকে আদানি গ্রুপের সব সংস্থার শেয়ারের দাম। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্রান্সমিশন। আন্তর্জাতিক বাজারেও মুখ পোড়ে আদানির। এই রিপোর্টের জেরে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা গৌতম আদানি ২৩ তম স্থানে নেমে আসে। যদিও বর্তমানে সেই হৃতগৌরব কিছুটা পুনরুদ্ধার করেছেন তিনি।
আদানির বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে সেবি। প্রায় আড়াই বছর পর বৃহস্পতিবার সেবি জানিয়েছে, আদানি পোর্টস ও আদানি পাওয়ারের সাথে অ্যাডিকর্প এন্টারপ্রাইস প্রাইভেট লিমিটেডের কোনও বেআইনি লেনদেন হয়নি। যাবতীয় লেনদেন বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া মেনেই করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে বলবৎ রয়েছে এমন কোনও আইন লঙ্ঘন করেননি আদানি।
সেবি আরও জানিয়েছে, আদানিরা সমস্ত ঋণ পরিশোধ করেছেন এবং সঠিক জায়গায় বরাদ্দ অর্থ ব্যবহার করেছেন।
সেবি'র স্থায়ী সদস্য কমলেশ বর্ষণে বলেন, "সমস্ত বিষয়টি বিবেচনা করে বলতে পারি, শো-কজ নোটিসে উল্লেখ করা অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। সুতরাং দায়বদ্ধতার প্রশ্নই উঠে না। শাস্তির ব্যাপার নির্ধারণের কোনও প্রয়োজন নেই।"
প্রত্যাশা মতোই কেন্দ্রের ক্লিনচিট পেয়ে উচ্ছ্বসিত গৌতম আদানি। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, "বিশদ তদন্তের পর আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষের করা ভিত্তিহিন অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। আমরা বরাবর স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রেখেছি। এই প্রতারণামূলক প্রচারে যে সমস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে, তাদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা আমাদের বিরুদ্ধে এই ধরণের প্রচার চালিয়েছে তাদের দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ভারতের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, দেশের জনগণ এবং দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি আমরা দায়বদ্ধ।"
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন