
নির্যাতিতা নিজেই এই বিপদ ডেকে এনেছিলেন। ধর্ষণের জন্য তিনি নিজেই দায়ী। সম্প্রতি এক ধর্ষণ মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ করল এলাহবাদ হাইকোর্ট। পাশাপাশি, অভিযুক্ত যুবকের জামিনও মঞ্জুর করেছেন বিচারপতি।
ধর্ষণ মামলায় জামিনের আবেদন চেয়ে এলাহবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত যুবক। সেই মামলার শুনানিতে এলাহবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জয়কুমার সিংহের বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘‘নির্যাতিতার অভিযোগকে যদি সত্য বলে মেনে নেওয়া হয়, তা-ও এটি বলা যেতে পারে যে তিনি নিজেই নিজের বিপদকে ডেকে এনেছিলেন। এর জন্য দায়ী তিনিই। নির্যাতিতার বয়ানে একই অবস্থান রয়েছে। মেডিক্যাল পরীক্ষায় জানা যায়, তাঁর সতীচ্ছদা (হাইমেন) ছিঁড়ে গিয়েছে, তবে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি চিকিৎসক”।
‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’ –এর খবর অনুসারে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘটেছে ঘটনাটি। অভিযোগকারী ওই তরুণী উত্তরপ্রদেশের নয়ডার এক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী। থাকতেন দিল্লির একটি পিজিতে। সে বছর সেপ্টেম্বরে দিল্লি হাউজ খাস এলাকায় তিন বান্ধবীর সঙ্গে একটি পানশালায় গিয়েছিলেন ওই তরুণী। সেখানে পূর্ব পরিচিত কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে দেখা হয় তাঁদের। অভিযোগ, সেখানেই এক পুরুষ তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন।
ওই তরুণীর দাবি, পানশালায় গিয়ে মত্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি। রাত ৩ টে পর্যন্ত পানশালায় ছিলেন তিনি। তরুণী জানিয়েছেন, পরিচিত যুবকদের মধ্যে একজন তাঁকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। বহুবার বলার পর তিনি তাঁর বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নিতে রাজি হন। অভিযোগ, বাড়ি যাওয়ার পথে ওই ব্যক্তি অনবরত তাঁকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করতে থাকেন এবং নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার বদলে গুরুগ্রামে এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।
এরপর গত বছরই নয়ডার এক থানায় ওই তরুণী অভিযোগ দায়ের করেন অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে। গত ১১ ডিসেম্বর অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও অভিযুক্ত তরুণীর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তরুণী সেই সময় একা থাকার অবস্থায় ছিলেন না। সে নিজেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন। যুবক আরও জানিয়েছেন, ধর্ষণ নয়, তরুণীর সম্মতিতেই ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন তাঁরা।
বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে এবং বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষা করার পর, আমি দেখতে পেয়েছি যে, নির্যাতিতা এবং আবেদনকারী উভয়ই প্রাপ্তবয়স্ক, এই বিষয়ে কোনও দ্বিমত নেই। নির্যাতিতা এমএ-এর ছাত্রী, তিনি পুলিশকে যে বয়ান দিয়েছেন, সেটি অনুসারে তিনি তাঁর কাজের নৈতিকতা এবং তাৎপর্য’ বুঝতে যথেষ্ট সক্ষম। তাই নির্যাতিতার অভিযোগ যদি সত্যি বলেও ধরা হয়, তাহলেও বলা যেতে পারে তিনি নিজেই এই বিপদ ডেকেছিলেন এবং এর জন্য দায়ীও ছিলেন।"
আদেশে আরও বলা হয়েছে, "নির্যাতিতার অভিযোগ, তাঁকে অন্য একজনের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে দু'বার ধর্ষণ করা হয়েছে। এটি মিথ্যা, রেকর্ডে থাকা প্রমাণের পরিপন্থী। মামলার তথ্য বিবেচনা করে, এটি ধর্ষণের মামলা নয় বরং বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্কের মামলা হতে পারে।"
মামলার গতিপ্রকৃতি, প্রমাণ এবং সমস্ত দিক বিচার করে অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর করেছে হাইকোর্ট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন