
প্রায় ৫০ দিন লুকিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হল না। অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন ১৭ শিক্ষার্থীকে যৌন হেনস্থার দায়ে অভিযুক্ত ‘স্বঘোষিত বাবা’ স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থ সারথি। রবিবার ভোরে তাঁকে আগ্রা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন।
‘স্বঘোষিত বাবা’র গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ৬২ বছর বয়সী এই সাধু গত ৪ আগস্টে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হবার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পুলিশ তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল। রবিবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ আগ্রা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্বঘোষিত বাবার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অনুসারে, তিনি তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের অশ্লীল মেসেজ পাঠাতেন, বেশি রাতে ছাত্রীদের তাঁর কোয়ার্টারে ডেকে পাঠাতেন। এছাড়াও ছাত্রীদের মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে তিনি তাঁদের গতিবিধি ট্র্যাক করতেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের হবার পরেই তিনি তাঁর একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ লক্ষ টাকা তোলেন। এরপরেও তাঁর বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৮ কোটি টাকার বেশি ছিল। যার সবটাই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীদের আরও অনুমান তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকার বেশি। জানা গেছে বিভিন্ন নামে আলাদা আলাদা পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তিনি একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালাতেন।
এদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করার পরে তাঁর কাছ থেকে দুটি ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যে কার্ডে লেখা আছে, তিনি ‘রাষ্ট্রসংঘের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত’। অন্য একটি কার্ডে নিজের নামের পাশে তিনি নিজেকে ব্রিকস দেশগুলির জয়েন্ট কমিশনের সদস্য বলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে এই দুটি ভিজিটিং কার্ডই ভুয়ো।
‘স্বঘোষিত বাবা’ স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থসারথি দক্ষিণ পশ্চিম দিল্লির শ্রী সারদা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর ছিলেন। যেখানে তিনি তাঁর পদের অপব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির (EWS) অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্থা করতেন। এই ছাত্রীরা বৃত্তি পেয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করছিলেন। এরকম ৩২ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ১৭ জন ছাত্রীর অভিযোগ, স্বামী চৈতন্যানন্দ তাদের সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেন, অশ্লীল টেক্সট বার্তা পাঠাতেন এবং নিজের বাসগৃহে বেশি রাতে ডেকে এনে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। ছাত্রীদের আরও দাবি, গুরুদেবের 'চাহিদা' মেটাতে আশ্রমের মহিলা কর্মী ও কয়েকজন আবাসিক ওয়ার্ডেন তাঁদের উপর চাপ দিতেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন