
আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির নামে মানুষকে লাঠিপেটা করা, মন্দিরের চারপাশে চক্রাকারে ঘোরানো, গাছের পাতা খাওয়ানো, জুতোর গন্ধ শোকানো এমনকি মূত্রপানেও বাধ্য করানো হত। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলার এক স্বঘোষিত 'বাবা'র গ্রামবাসীদের উপর করা নির্মম অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এরপরেই ওই স্বঘোষিত বাবার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলার বৈজাপুর তহসিলের শিউর গ্রামের একটি মন্দিরে ওই 'বাবা'র বসবাস। স্বঘোষিত ওই বাবার নাম সঞ্জয় পাগারে। যিনি নিজেকে অলৌকিক শক্তির অধিকারী বলে দাবি করতেন। ভূত তাড়ানো থেকে শুরু করে অবিবাহিতদের বিয়ে এবং নিঃসন্তানদের সন্তানলাভের জন্য তথাকথিত 'অঘোরী' আচারানুষ্ঠান সম্পাদন করতেন তিনি।
অভিযোগ, এই সমস্ত কাজের নামে গত দু'বছর ধরে ওই গ্রামের মানুষদের উপর একপ্রকার নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছেন ওই স্বঘোষিত বাবা। খবর পেয়ে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য স্টিং অপারেশন করে স্থানীয় একটি কুসংস্কারবিরোধী সংগঠন। ওই বাবার একাধিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। (সেই সমস্ত ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা এক ব্যক্তি মাটিতে শুয়ে আছেন এবং স্বঘোষিত বাবা নিজের জুতা তাঁর মুখের ওপর ঠেসে ধরেছেন। দীর্ঘ সময়ের পীড়নের পর ওই ব্যক্তিকে অর্ধচেতন অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যায়। তখন তাঁর ওপর হলুদ রঙের কোনও একটি গুঁড়ো ছড়িয়ে দেন সঞ্জয় পাগারে। এরপর তাঁকে নিজের জুতো শুঁকতে বাধ্য করেন এবং মুখের সামনে অনবরত জোরে জোরে ঢোল বাজাতে থাকেন। ভিডিওর শেষে দেখা যায়, লোকটি অন্যদের সাহায্য নিয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর নিজের ওপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ ছিল বলে মনে হচ্ছিল না।
অন্য একটা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে নির্মমভাবে লাঠিপেটা করছেন স্বঘোষিত বাবা। তাঁর ভাষায়, এটা হচ্ছে আত্মিক পরিশুদ্ধির অংশ, যা তাঁর কাছে চিকিৎসা নিতে আসা সকলের জন্য ছিল বাধ্যতামূলক দাওয়াই।
ওই সংগঠনের কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই সঞ্জয় পাগারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে পুলিশ। প্রতারণা, মারধর এবং কুসংস্কার প্রচারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের অপরাধ না হয়, তার জন্য মহারাষ্ট্রের কুসংস্কার ও কালো জাদু বিরোধী আইনের আরও কঠোর ধারা প্রয়োগের দাবি তুলেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন