'গণপিটুনির বিচার চাওয়া অপরাধ নয়' - অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের পাশে প্রাক্তন আমলাদের সংগঠন

People's Reporter: বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণপিটুনি এবং বুলডোজার দিয়ে কিছু ধ্বংস করায় আক্রান্তের জন্য ন্যায়বিচার চাওয়া অথবা শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানানো অপরাধ হতে পারে না।
অশোকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ
অশোকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ ছবি, আলি খান মাহমুদাবাদের ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
Published on

অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হল প্রাক্তন আমলাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন সিভিল সার্ভেন্টস গ্রুপ। পাশাপাশি ওই অধ্যাপকের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করায় সুপ্রিম কোর্টকেও ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তবে তাঁদের বিবৃতিতে স্পষ্ট যে, কোনও অন্যায় করেননি ওই অধ্যাপক।

৭৯ জন প্রাক্তন আমলার সই করা ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা প্রাক্তন বেসামরিক কর্মচারীদের একটি দল, যারা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করি না। আমাদের একমাত্র আনুগত্য ভারতের সংবিধানের প্রতি।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের এবং তাঁর গ্রেপ্তারিতে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কিত তাঁর দুটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের জন্য অধ্যাপক আলি খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁর পোস্টগুলি ছিল চিন্তাশীল। এই পোস্টগুলিতে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংযমের প্রশংসা করেছেন। তাঁর পোস্টের মূল লক্ষ্য ছিল শান্তির জন্য স্পষ্টভাষী ও আন্তরিক আবেদন। তিনি দু'পক্ষের সাধারণ মানুষের প্রাণহানিকে "দুঃখজনক" বলে বর্ণনা করেছেন এবং যুদ্ধের ভয়াভ অভিজ্ঞতা যাঁদের হয়নি, এমন নাগরিকদের যুদ্ধ উন্মাদনার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।"

তাঁরা জানিয়েছেন, এই মন্তব্যের জন্যই অধ্যাপক আলির বিরুদ্ধে ভারতের নতুন ফৌজদারি আইন - ভারতীয় ন্যায় সংহিতার কঠোর ধারাগুলির অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ১৫২ ধারা, যা "ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য এবং অখণ্ডতা বিপন্নকারী" কার্যকলাপের জন্য শাস্তি দেয়।

অধ্যাপক আলী খানের বিরুদ্ধে যেসব অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ১৯৬(১)(খ), যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করার অপরাধ, ১৯৭(১)(গ) ধারা, যার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে এবং ২৯৯ ধারা, যেখানে "ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ কার্যকলাপের" অপরাধে শাস্তি প্রদান করা হয়।

এই ধারা দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানায় আমলাদের সংগঠনটি। তাঁরা জানান, "আমরা অধ্যাপক আলি খানের বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি অভিযোগগুলিকে জঘন্য এবং অযৌক্তিক বলে মনে করি। গণপিটুনি এবং বুলডোজার দিয়ে কিছু ধ্বংস করায় আক্রান্তের জন্য ন্যায়বিচার চাওয়া অথবা শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানানো অপরাধ হতে পারে না। সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। কিন্তু, যথাযথ সম্মানের সাথে বলছি বেঞ্চের কিছু মন্তব্য এবং জামিনের শর্তাবলী দেখে আমরা হতাশ।"

প্রসঙ্গত, ‘অপারেশান সিঁদুর’ সম্পর্কিত এক সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টের পর দুটি এফআইআর-এর ভিত্তিতে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয় অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে। যার মধ্যে একটি এফআইআর দায়ের করেছিলেন হরিয়ানা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেণু ভাটিয়া এবং অন্য এফআইআরটি করেন স্থানীয় এক গ্রামের সরপঞ্চ ও বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক জোগেশ জাঠেদি।

হরিয়ানা মহিলা রাজ্য কমিশনের পক্ষ থেকেও ওই অধ্যাপককে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। যে নোটিশ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জানিয়েছিলেন, তাঁর বক্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ করা হয়েছে।

অধ্যাপক মাহমুদাবাদ তাঁর পোস্টে লিখেছিলেন, "আমি খুব খুশি যে এত দক্ষিণপন্থী ভাষ্যকার কর্নেল সোফিয়া কুরেশীর প্রশংসা করছেন, কিন্তু পাশাপাশি তারা তো একইভাবে গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার চালানোর শিকার এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে সুরক্ষিত রাখা হোক - এরকম দাবিও তো করতে পারেন। দুই মহিলা সৈনিকের তথ্য উপস্থাপনের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে, অন্যথায় এটি কেবল ভণ্ডামি হবে।"

পরে তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি এন. কে. সিং-এর বেঞ্চ অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে। বিচারপতি সূর্যকান্ত জানিয়েছিলেন, "সকলেরই বাকস্বাধীনতা আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় সস্তার জনপ্রিয়তা পেতে অপারেশন সিঁদুরকে ব্যবহার করা হবে। যখন বহিরাগত শক্তি আমাদের দেশকে আক্রমণ করছে তখন সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।"

অশোকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ
'এক হাতে কখনও তালি বাজে না!' ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তকে জামিন দিয়ে পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের
অশোকা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদ
Assam: মাত্র ১৫ মাসে ১৭১ এনকাউন্টার! আসাম মানবাধিকার কমিশনকে তদন্তের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in