
গত পাঁচ দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। গত ২৪ ঘন্টায় শুধু আসামের শিলচরে বৃষ্টি হয়েছে ৪১৫.৮ মিমি, যা ১৮৯৩ সালের পর একদিনে সর্বোচ্চ। এদিকে লাগাতার বৃষ্টি ও ভূমিধসের জেরে অসম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং সিকিম মিলিয়ে গত দু'দিনে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধার কাজে নেমেছে ভারতীয় বায়ুসেনা এবং অসম রাইফেলসের জওয়ানরা।
২০২২ সালে বেথকুন্ডিতে বরাক নদীর উপর একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হয়েছিল শিলচর। ৯০ শতাংশ শহর জলমগ্ন ছিল। আর তারপর চলতি বছর লাগাতার বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন শিলচর। ১ জুন শিলচরে ১৩২ বছরের পুরনো ২৯০.৩ মিমি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে গেছে।
২৮ মে থেকে ১ জুন - গত পাঁচ দিনে মেঘালয়েও রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার মধ্যে চেরাপুঞ্জি ও মৌসিনরামে যথাক্রমে ৭৯৬ মিমি এবং ৭৭৪.৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৩১ মে মিজোরামে স্বাভাবিকের চেয়ে ১,১০২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে মেঘালয়ের ১০ টি জেলা বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রিপুরায় ১০,০০০-এরও বেশি মানুষ আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
লাগাতার বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত আসাম। সে রাজ্যের ১৯ টি জেলার ৭৬৪টি গ্রামের ৩.৬ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এদিন আরও দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে আসামে এখন বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০। ডিব্রুগড়, নিমাতিঘাট সহ অন্যান্য স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ১০,০০০-এরও বেশি মানুষকে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের আরেক প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমেও প্রবল বৃষ্টি ও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিস্তীৰ্ণ এলাকা। যার জেরে উত্তর সিকিমে ১,২০০ জনেরও বেশি পর্যটক আটকে পড়েছেন। রবিবার তাঁদের সরিয়ে আনার কথা থাকলেও নতুন করে ভূমিধসের ফলে তা হয়নি। ২৯ মে মুন্সিথাং-এ তিস্তা নদীতে গাড়ি ডুবে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আট পর্যটক এখনও কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মণিপুরে বন্যায় ১৯,০০০-এরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিধসের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩,৩৬৫টি বাড়ি। মণিপুরের পূর্ব ইম্ফল ও পশ্চিম ইম্ফল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।
রবিবারই অরুণাচল, অসম, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী এবং মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি। এক্স হ্যান্ডেলে অমিত শাহ পোস্ট করে সেকথা খোদ জানিয়েছেন তিনি।
আসামের মন্ত্রী জয়ন্ত মাল্লাবারুয়া নিহতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন