কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের ওপর হামলার নিন্দা করলো সারা ভারত কৃষক সভা (AIKS) সহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতা রাকেশ টিকায়েতের ওপর এই হামলা হয়। অভিযোগ, দক্ষিণপন্থী এক সংগঠনের সদস্যরা গেরুয়া পতাকা নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। গতকাল পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদে এক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। যে সভায় টিকায়েত বলেন, এই জঙ্গী হামলা আসলে পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ বাড়িয়ে তোলার জন্য করা হয়েছে।
শনিবার সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়। এআইকেএস এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে - ২ মে মুজফফরনগরে এক সমাবেশে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (বিকেইউ) নেতা রাকেশ টিকাইতের উপর লজ্জাজনক সহিংস হামলার নিন্দা করছে সর্বভারতীয় কিষাণ সভা। পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে এই সমাবেশ আয়োজিত হয়েছিল। হামলা প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর মঞ্চে উঠে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখার সময়, সমাবেশে উপস্থিত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা টিকাইতকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই আক্রমণ বিকেইউ কর্মীদের একটি ছোট দল নিয়ে সমাবেশে যোগদানকারী কৃষক নেতাকে থামিয়ে দেবার জন্য দক্ষিণপন্থীদের এক পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত ছিল। ঘটনার ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে তাকে সাধারণ জনগণ নয়, বরং তাঁকে গুন্ডারা কোণঠাসা করে রেখেছিল।
গতকালের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা জানিয়েছে, “পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা, যে হামলায় ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আক্রোশ সমাবেশে অংশ নেবার সময় উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এসকেএম। সংগঠনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সমস্ত দোষীদের গ্রেপ্তার এবং উত্তরপ্রদেশে 'জঙ্গলরাজ' বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছে।”
পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদে দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলির দ্বারা আয়োজিত এক সমাবেশে শুক্রবার রাকেশ টিকায়েতকে হেনস্থা করা হয় এবং তাকে ‘গো ব্যাক’ বলা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, হট্টগোলের মধ্যে তাঁর পাগড়ি মাটিতে পড়ে যায়।
এসকেএম জানিয়েছে, “জম্মু কাশ্মীরের পহেলগামে ভারতের উপর সাম্রাজ্যবাদী-মদতে সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে সমগ্র জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে, ‘গেরুয়া’ পতাকা ধারণ করে এবং ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান দিয়ে একদল জনতা রাকেশ টিকায়েতকে মারধোর করে। তাঁকে পতাকার লাঠি দিয়ে মারা হয় এবং তাঁকে মারাত্মক আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে তার মাথার পাগড়ি ফেলে দেওয়া হয়।
এসকেএম-এর বিবৃতি অনুসারে, “উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ কর্মী জনতার আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ঘটনায় আরএসএস-বিজেপি জোটের দেশবিরোধী, নব্য-ফ্যাসিবাদী মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এসকেএম নেতার এসকেএম নেতার উপর হামলার নিন্দা করেননি এবং দোষীদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করেননি।”
কৃষক সংগঠনের আরও অভিযোগ, আরএসএস-বিজেপি জোট পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর সর্ব স্তরের জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে সংখ্যালঘু, কৃষক, শ্রমজীবী মানুষ এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতি আস্থা জ্ঞাপনকারী সব প্রগতিশীল অংশের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এখনও পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশের আগ্রা এবং কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে সংঘ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত উগ্র দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি দুই মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশে তাঁদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিবৃতিতে এসকেএম জানিয়েছে, সমাজের সকল অংশের মানুষকে সংখ্যালঘু, কৃষক এবং শ্রমজীবী মানুষের বিরুদ্ধে বিভেদমূলক এবং হিংস্র প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে একজোট হবার আহ্বান জানিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন