
শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও পড়ুয়া যেন বর্ণবৈষম্যের শিকার না হয় তার জন্য কংগ্রেস শাসিত তেলেঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। এই দুই রাজ্যের সরকারকে 'রোহিত ভেমুলা আইন' বাস্তবায়নের পক্ষে সওয়াল করেছেন রাহুল।
এক্স মাধ্যমে রাহুল গান্ধী লেখেন, ''কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াজীকে চিঠি লেখার পর, আমি হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুজী এবং তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডিজীকে চিঠি লিখে 'রোহিত ভেমুলা আইন' বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছি। কংগ্রেস দল প্রতিটি শিশুর জন্য সমান শিক্ষার সুযোগ প্রদান এবং বর্ণবৈষম্য দূর করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।''
তিনি আরও লেখেন, "সম্প্রতি আমি সংসদে দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসি সম্প্রদায়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে দেখা করেছি। তাঁদের সাথে কথোপকথন হয়েছে আমার। তাঁরা জানান, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কীভাবে বর্ণের ভিত্তিতে তাঁদের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়"।
বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলনেতা লেখেন, "বাবাসাহেব আম্বেদকর দেখিয়েছিলেন যে শিক্ষাই একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে বঞ্চিতরাও ক্ষমতায়িত হতে পারে এবং বর্ণবৈষম্য দূর করতে পারে। কিন্তু এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে কয়েক দশক পরেও, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী বর্ণবৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছে।"
রাহুল লেখেন, "এই বৈষম্য রোহিত ভেমুলা, পায়েল তাদভি এবং দর্শন সোলাঙ্কির মতো প্রতিশ্রুতিবান শিক্ষার্থীদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনা কোনও মূল্যেই আর মেনে নেওয়া যাবে না। এখনই সময় এই অন্যায়ের সম্পূর্ণ অবসান ঘটানোর"।
রাহুল গান্ধী জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে যতক্ষণ না বর্ণবৈষম্য দূর হচ্ছে, কংগ্রেস লড়াই চালিয়ে যাবে। এক্স মাধ্যমে তিনি জানান, "যতক্ষণ না প্রতিটি শিক্ষার্থী সমান সম্মান, নিরাপত্তা এবং সুযোগ না পান, ততক্ষণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সকলের জন্য ন্যায্য হতে পারে না।"
কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্য দূর করার জন্য 'রোহিত ভেমুলা আইন' চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। আপাতত কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে এই আইন বাস্তবায়িত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি লিখেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ৮ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি রোহিত ভেমুলার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। দেশদ্রোহের অভিযোগ তুলে, তৎকালীন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রোহিত-সহ ৪ দলিত পড়ুয়াকে সাসপেন্ড ও হোস্টেলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪ মাস হস্টেলের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থাকার পরে আত্মহত্যা করেন রোহিত ভেমুলা।
এই ঘটনায় হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং আরএসএস-এর ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP)-র এক নেতার বিরুদ্ধে রোহিতকে হেনস্থার অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে পুলিশ। তারপর থেকে তদন্ত বিশেষ কিছু এগোয়নি। রোহিতের মৃত্যুতে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাম ছাত্রসংগঠনগুলি। এমনকি সংসদে বিষয়টি তুলেছিলেন রাহুল গান্ধীও।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন