
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল লোকসভায় ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বিল পেশ করলেন। যদিও ইন্ডিয়া মঞ্চের পক্ষ থেকে এই বিল নিয়ে তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে। আইনমন্ত্রকের সূত্র অনুসারে দেশে দুটি ভাগে একসাথে নির্বাচনের প্রয়োগ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
এদিন এই বিলের বিরোধিতা করে কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তেওয়ারি বলেন, আমাদের সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তরাষ্ট্রীয়তা এবং আমাদের গণতন্ত্রের কাঠামো। মাননীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত বিলগুলি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর আঘাত হানে এবং এই সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অতিক্রম করে।
সরকারিভাবে নতুন এই বিল-এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘কনস্টিটিউশন (ওয়ান হান্ড্রেড অ্যান্ড টুয়েন্টি নাইনথ অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল’ (Constitution (One Hundred and Twenty Ninth Amendment) Bill)। যে বিলে একইসাথে লোকসভা এবং বিভিন্ন বিধানসভার নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন টেরিটরিস ল’জ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৪ (Union Territories Laws (Amendment) Bill, 2024) নামের আরও একটি বিল আনার কথা বলা হয়েছে। যে বিলে জম্মু ও কাশ্মীর, পুদুচেরি এবং দিল্লির নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একযোগে নির্বাচনের দুটি পর্যায় থাকবে। যাতে প্রথম পর্যায়ে সমস্ত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ১০০ দিনের মধ্যে সমস্ত পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আইনমন্ত্রকের বিবৃতি অনুসারে ৩২টি রাজনৈতিক দল ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’-কে সমর্থন করেছে এবং ১৫ টি রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেছে।
জানা গেছে রাজ্যসভায় এই বিলে পেশ করার সম্ভাবনা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র। গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এই বিলে অনুমোদন দিয়েছিল।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে কমিটি গড়েছিল কেন্দ্র। এই কমিটিতে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রাক্তন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং, লোকসভার প্রাক্তন মহাসচিব সুভাষ কাশ্যপ এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে। এই কমিটিতে যোগদানের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেইসময় লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরিকে। কিন্তু ‘এক দেশ এক ভোট’-এর বিরোধিতা করে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি তিনি।
ওই কমিটিই লোকসভা নির্বাচনের আগে ১৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মর কাছে আট খন্ডে বিভক্ত ১৮ হাজার পাতার রিপোর্ট জমা দেয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ (ONOE) শীর্ষক উচ্চস্তরীয় কমিটিকে লেখা চিঠিতে সিপিআইএম-এর অবস্থান জানিয়ে প্রয়াত সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি লিখেছিলেন, যে পদ্ধতিতে দেশের মানুষের ওপর ‘এক দেশ, এক ভোট’ চাপিয়ে দেবার চেষ্টা হচ্ছে তাতে সিপিআইএম তীব্র আপত্তি জানাচ্ছে। যখন থেকে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলির ভোট একসঙ্গে করার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল, তখন থেকেই CPI(M) তার বিরোধিতা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে এদিনই লোকসভা সাংসদদের জন্য হুইপ জারি করেছে কংগ্রেস। মঙ্গলবার লোকসভায় ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বিল পেশ করার সময় সমস্ত কংগ্রেস সাংসদদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এদিনই সকালে কংগ্রেসের সাংসদদল এই বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন