
রাজস্থানের জয়পুরে সরকার-পরিচালিত সাওয়াই মান সিংহ (এসএমএস) হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে রবিবার গভীর রাতে ভয়াবহ আগুন লাগে। যার জেরে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ছয় জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর। হাসপাতালের নিউরো আইসিইউ বিভাগের পাশে থাকা স্টোররুমে প্রথম আগুন লাগে বলে জানা গেছে। সরকারি কর্তাদের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
ট্রমা সেন্টারের ইন-চার্জ ডাক্তার অনুরাগ ধাকড় জানান, নিউরো আইসিইউ-তে সে সময় মোট ১১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। স্টোরেজ এলাকায় হঠাৎ আগুন লেগে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো তলায়। মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সৃষ্টি হয় চরম বিশৃঙ্খলার।
তিনি জানান, "অগ্নিকাণ্ডে মোট ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চার জন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা। বাকিদের নিরাপদে আইসিইউ থেকে বার করে আনা গিয়েছে। অন্যত্র তাঁদের চিকিৎসা চলছে।"
ধোঁয়ায় পুরো ভবন ঢেকে যাওয়ায় রোগী, আত্মীয় ও হাসপাতালের কর্মীরা আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। আইসিইউ সরঞ্জাম, মেডিক্যাল নথি, রক্তের নমুনা রাখার টিউব এবং নানা চিকিৎসা সামগ্রী পুড়ে যায়।
হাসপাতাল কর্মী ও রোগীর পরিজনরা প্রথম উদ্ধারকাজে হাত লাগান। রোগীদের উদ্ধার করতে শুরু করেন। অনেককে বিছানাসহ টেনে বাইরে আনা হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয় বিকাশ জানিয়েছেন, “আমরা অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম, তখনই খবর পাই আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে যাই। তিন-চারজনকে বের করতে পেরেছিলাম, কিন্তু পরে আগুন এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে আর ভিতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।”
তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। পরে দমকল কর্মীরা ভবনের উপরের দিকের জানালা ভেঙে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী যোগারাম প্যাটেল ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জওহর সিং বেধাম রাতেই হাসপাতালে পৌঁছান। শুরুতে দুই মন্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলে কয়েকজন রোগীর আত্মীয় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরই হাসপাতালের কর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যান।
এক রোগীর পরিবারের সদস্য জানান, “আমরা প্রথম ধোঁয়া দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। পরে আগুন লাগলে সবাই পালিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত আমাদের রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে কেউ কিছু বলছে না।”
পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে ট্রমা সেন্টার পরিদর্শন করে চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দেন।
এই অগ্নিকাণ্ডে রাজ্যের অন্যতম বড় সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রোগীর পরিবার এবং চিকিৎসক মহলে ইতিমধ্যেই দাবি উঠেছে, দ্রুত দায়িত্ব নির্ধারণ করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন