
কাফ সিরাপ বিতর্কে মধ্যপ্রদেশে গ্রেপ্তার হলেন এক চিকিৎসক। পুলিশ সূত্র অনুসারে, মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ার চিকিৎসক প্রবীণ সোনিকে কোল্ডরিফ সিরাপ কান্ডে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১১ শিশুর মৃত্যুর পর এই কাফ সিরাপ কান্ড সামনে আসে। অভিযোগ, মৃত শিশুদের ওই কাফ সিরাপ প্রেসক্রাইব করেছিলেন ডাঃ প্রবীণ সোনি।
চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ সরকার তামিলনাড়ুর শ্রীসান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর বিরুদ্ধে এক মামলা দায়ের করেছে। এই সংস্থাই বিতর্কিত কোল্ডরিফ সিরাপের নির্মাতা সংস্থা। যাদের অফিস তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমে। এই আগেই মধ্যপ্রদেশে এই সিরাপ বিক্রির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এনডিটিভি-র এক প্রতিবেদন অনুসারে, সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই ওষুধের স্যাম্পেলে ৪৮.৬ শতাংশ ডায়েথিলিন গ্লাইকোল (Diethylene Glycol) পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং কিডনি বিকল করে দিতে পারে। শনিবারই ল্যাবরেটরি থেকে এই রিপোর্ট আসে এবং এরপরেই চিকিৎসক সোনীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মৃত শিশুদের পরিবারের বক্তব্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে এই শিশুদের প্রবল ঠান্ডা লাগে এবং হালকা জ্বর আসে। তাঁদের চিকিৎসার পর এই কাফ সিরাপ প্রেসক্রাইব করা হয়। কয়েকদিনের মধ্যে শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠলেও এর কয়েকদিন পরেই ফের পুরোনো উপসর্গ ফিরে আসে এবং অস্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের মাত্রা কমে যায়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে কিডনিতে সংক্রমণ দেখা দেয় এবং ওই শিশুদের মৃত্যু হয়।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব, শিশুদের মৃত্যুকে ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেন এবং যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দেন। এর পরেই জোরকদমে তদন্ত শুরু করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।
গত শনিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) এক বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব জানান, “কোল্ডরিফ সিরাপের কারণে ছিন্দোয়ারায় শিশুদের মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। সমগ্র মধ্যপ্রদেশে এই সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিরাপ প্রস্তুতকারী কোম্পানির অন্যান্য পণ্য বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।"
ওই বার্তায় তিনি আরও জানান, "সিরাপ তৈরির কারখানাটি কাঞ্চিপুরমে অবস্থিত, তাই ঘটনাটি জানার পর, রাজ্য সরকার তামিলনাড়ু সরকারকে তদন্ত করতে বলেছে। আজ সকালে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশুদের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য পর্যায়েও এই বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে। দোষীদের কোনও মূল্যে ছাড় দেওয়া হবে না।”
চিকিৎসক প্রবীণ সোনি একজন সরকারি চিকিৎসক বলে জানা গেছে। পারাসিয়াতে তাঁর একটি ক্লিনিকও আছে। মৃত শিশুদের অধিকাংশেরই এই ক্লিনিকে চিকিৎসা করা হয়। জেনে অথবা না জেনে অভিযুক্ত চিকিৎসকই এই সিরাপ প্রেসক্রিপশনে লিখেছিলেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন