
মঙ্গলবারই তিনি রাজ্যবাসীর কাছে ১৯ মাস পর ক্ষমা চেয়েছিলেন। আর এর ঠিক পরেই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং কংগ্রেসকে আক্রমণের রাস্তায় হাঁটলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মণিপুরের সাম্প্রতিক অবস্থা কংগ্রেসের করা পূর্বতন পাপের কারণে। এর আগেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে কেন যাননি সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
গতকাল বীরেন সিং বলেন, রাজ্যে যা হয়েছে আমি তার জন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। বহু মানুষ তাঁদের কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। বহু মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। আমি সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
এর পরেই জয়রাম রমেশ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) লেখেন, কেন প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে যাননি এবং সেখানে গিয়ে এই কথা বলেননি? তিনি ২০২৩-এর ৪ মে থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে মণিপুরে যাওয়া এড়িয়ে গেছে। অথচ এই সময়েই তিনি দেশ এবং বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মণিপুরের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই অবহেলা বুঝতে অক্ষম।
এর উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এক্স হ্যান্ডেলেই জানান, আপনি এবং প্রত্যেকেই জানেন মণিপুরের বর্তমান এই অবস্থার জন্য দায়ী কংগ্রেস। বারবার বার্মার উদ্বাস্তুদের মণিপুরে জায়গা দেওয়া এবং পি চিদাম্বরম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সেখানকার জঙ্গীদের সঙ্গে চুক্তির কারণেই আজ মণিপুরের এই অবস্থা।
ওই বার্তাতেই তিনি আরও লেখেন, "আজ আমি যে ক্ষমা চেয়েছি সেখানে বাস্তুচ্যুত এবং গৃহহীন মানুষদের প্রতি আন্তরিকভাবেই দুঃখ প্রকাশ করেছি। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, এখানে যা ঘটেছে তা ক্ষমা করে দেওয়ার এবং ভুলে যাওয়ার জন্য একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এর মধ্যেও আপনি রাজনীতি টেনে এনেছেন।"
তিনি আরও বলেন, "কুকি-পাইতে সংঘর্ষের বেশিরভাগ সময় (১৯৯৭-১৯৯৮), শ্রী আই কে গুজরাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি কি সেইসময় মণিপুর সফর করেছিলেন এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন? মণিপুরের মূল সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করার পরিবর্তে, কেন @INCIndia সর্বদা এটি নিয়ে রাজনীতি করছে?"
উল্লেখ্য, ১৯ মাস পর ২০২৪-এর শেষে মণিপুর হিংসার জন্য রাজ্যের সমস্ত নাগরিকের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। মঙ্গলবার ইম্ফলে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যবাসীর জন্য বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘গোটা বছর দুর্ভাগ্যজনক কেটেছে আমাদের। গত বছরের ৩ মে থেকে যা ঘটে চলেছে রাজ্যে তার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। অনেকেই প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন। আমি অনুতপ্ত। ক্ষমা চাইছি’।
এরপরেই গত তিন চার মাসে মণিপুরের পরিস্থিতি দেখে মুখ্যমন্ত্রীর আশা, ‘গত তিন-চার মাসের শান্তি পরিস্থিতি দেখে আমার আশা যে ২০২৫-এর মধ্যে রাজ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে’। পাশাপাশি তিনি রাজ্যের ৩৫ টি উপজাতি গোষ্ঠীকে মিলেমিশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন।
গত বছর মে মাসে রাজ্যের মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। এই হিংসার ফলে সে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বাড়ি ছাড়া হয়েছেন বহু মানুষ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন