ধর্মস্থলে খুন হওয়া বহু ধর্ষিতার দেহ কবর দিতে বাধ্য করা হয়েছে! ২৫ বছর পর স্বীকারোক্তি প্রাক্তন কর্মীর

People's Reporter: ১৯৯৮ থেকে ২০১৪ - ১৬ বছর ধরে একাধিক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার ধর্মস্থলে। ওই কর্মী জানিয়েছেন, তাঁকে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে মৃতদেহগুলি কবর দিতে বাধ্য করানো হত।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
Published on

১৯৯৮ থেকে ২০১৪ - ১৬ বছর ধরে একের পর এক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে কর্ণাটকের দক্ষিণ কন্নড় জেলার ধর্মস্থলে। কখনও নির্যাতিতাদের দেহ সরাসরি কবর দেওয়া হয়েছে আবার কখনও দেহ পুড়িয়ে তারপর কবর দেওয়া হত। নিহতদের মধ্যে ছিল নাবালিকাও। নির্যাতিতদের পরিবার পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেও কোনও লাভ হয়নি। সম্প্রতি পুলিশের কাছে এমনই এক চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি করেছেন ধর্মস্থল মন্দির প্রশাসনের প্রাক্তন সাফাই কর্মীর।

ওই শিবমন্দিরের প্রাক্তন সাফাইকর্মী থানায় নিজের স্বীকারোক্তিতে বলেন, "ধর্মস্থলা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি-কর্মীরাই তাঁদের যৌন লালসা চরিতার্থ করতে স্কুল ছাত্রী, তরুণীদের তুলে আনত। আর সেই সব দেহ সৎকার করতে হত আমাকে। ২০১০ সালে ১২-১৫ বছর বয়সি একটা মেয়েকে মাটি চাপা দিতে হয়। তার ঊর্ধ্বাঙ্গে স্কুলের ইউনিফর্ম ছিল। নিচের স্কার্ট ও অন্তর্বাস ছিল না"।

ওই সাফাই কর্মী বলেন, "আমি নিম্নবর্ণের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধর্মস্থলা মন্দির ও নেত্রাবতী নদীর আশপাশ পরিষ্কার করার কাজ করেছি"। তাঁর অভিযোগ, মন্দিরের উচ্চপদস্থ কর্মীরা তাঁকে ডেকে দেহগুলি সৎকারের নির্দেশ দিতেন। তিনি বলেন, "প্রথমে আমি ভাবতাম আত্মহত্যা করে বা জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে মেয়েগুলির। বেশিরভাগ দেহেই কোনও পোশাক থাকত না। কয়েকজনের দেহে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যেত। গলা টিপে মেরে ফেলার প্রমাণও দেখতে পেতাম। ২০ বছর বয়সি এক মহিলার মুখ অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে দেহটি খবরের কাগজে মুড়ে ফেলে দিয়েছিল"।

ম্যাঙ্গালুরু থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশিষ্ট মন্দির শহর যা জৈন হেগড়ে পরিবার দ্বারা পরিচালিত শিব মন্দিরের জন্য পরিচিত। ৩ জুলাই ওই ব্যক্তি ম্যাঙ্গালুরু পুলিশ সুপার এবং ধর্মস্থল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই সাফাই কর্মী জানিয়েছেন, তাঁকে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে এই নৃশংস কাজগুলি জোর করে করানো হত। তিনি আরও জানিয়েছেন, বহু দিন তিনি তাঁর পরিবারকে নিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। অবশেষে এই জঘন্য অপরাধের আত্মগ্লানি বইতে না পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।

ওই ব্যক্তি বলেন, “১১ বছর আগে আমার পরিবারের এক নাবালিকার উপরেও অত্যাচারের চেষ্টা করেছিল মন্দিরের লোকজন। এরপরই আমি পড়শি রাজ্যে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাই। সেখানে পরিচয় বদলে, বারবার বাড়ি বদলে থাকতাম। মনে হত, যে কোনও সময় ওই লোকগুলো এসে আমাদের খুন করতে পারে। যারা ওদের কথা শুনত না, তাঁদের খতম করে দিত"।

পুলিশের কাছে প্রায় দু'দশক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ, ছবি-সহ প্রমাণ জমা দিয়েছেন ওই দলিত সাফাইকর্মী। তাঁর আর্জি, যে সব জায়গায় তিনি ধর্ষিতা মৃতদেহগুলির কবর দিয়েছিলেন সেই সব জায়গায় গিয়ে পুলিশ যেন দেহাবশেষ তুলে এনে তদন্ত শুরু করে। থানায় অভিযোগের পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে ভি ধনঞ্জয়কে তাঁর অভিযোগের একটি প্রতিলিপিও দিয়েছেন।

দক্ষিণ কন্নড়ের পুলিশ সুপার এস পি অরুণ জানান, গত ৩ জুলাই ওই ব্যক্তির অভিযোগ পেয়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২১১ (এ) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাঁর পরিচয় প্রকাশ না করার আবেদন জানিয়েছেন অভিযোগকারী। সাফাইকর্মীর আশঙ্কা, মূল অভিযুক্তদের নাম তিনি প্রকাশ করার পর খুন বা নিখোঁজ হতে পারেন তিনি।

প্রতীকী ছবি
Bihar: শ্রমকোডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ৯ জুলাই ধর্মঘটে পাটনায় চাক্কা জ্যামে অংশ নেবেন রাহুল গান্ধী

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in