নাড্ডার 'বিশেষ নজর দিতে হবে' মন্তব্যের পরই সাম্প্রদায়িক হিংসা, অভিযোগ CPIM ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির

রিপোর্টে বলা হয়েছে, "BJP-RSS এই ঘটনার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। করৌলির মতো শান্তিপূর্ণ অথচ ঘিঞ্জি এলাকা বেছে নিয়েছিল তারা। পরিকল্পিতভাবে নানারকম গুজব ছড়িয়েছিল।"
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন CPIM ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন CPIM ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরাছবি সৌজন্যে সিপিআইএম রাজস্থান ফেসবুক পেজ
Published on

রাজস্থানের করৌলিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। সিপিআইএমের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টে এই দাবি করা হয়েছে। কমিটির অভিযোগ, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার রাজ্য সফরের পরই এই হিংসা হয়েছে।

গত ২ এপ্রিল হিন্দু নববর্ষ উপলক্ষ্যে করৌলির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বাইক মিছিল চলাকালীন সংর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় প্রায় ৩৫ জন আহত হয়েছেন। একাধিক বাড়ি, দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মিছিলে অংশগ্রহণকারী ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠরা লাউডস্পিকারের মাধ্যমে উস্কানিমূলক মন্তব্য ও স্লোগান দিচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়। দোকান, বাড়ি, বাইক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছে সিপিআইএম। ভাদ্রার বিধায়ক বলবন্ত পুনিয়া এবং দলীয় নেতা ডঃ সঞ্জয় মাধবের নেতৃত্বাধীন কমিটি মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। দাঙ্গায় পুড়ে যাওয়া বাড়ি-দোকান পরিদর্শন করে। এরপর সাংবাদিক বৈঠকে বলবন্ত পুনিয়া সরাসরি অভিযোগ করেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার রাজস্থান সফরের পরই এই হিংসা হয়েছে। সফরে এসে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে নাড্ডা বলেছিলেন, পূর্ব রাজস্থানে যেসব এলাকায় বিজেপি গত ভোটে খারাপ ফল করেছে সেই সব জায়গায় বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। তারপরই এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির।

ওই রিপোর্টে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে যে এলাকায় দাঙ্গা হয়েছে সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে। বাজারেও দুই সম্প্রদায়ের মানুষের দোকান রয়েছে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ন এবং অজস্র সরু গলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কমিটির মতে এরকম এলাকায় শোভাযাত্রা করার অনুমতি দেওয়াই উচিত হয়নি প্রশাসনের।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, "বিজেপি এবং আরএসএসের মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি এই ঘটনার (সহিংসতা) জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। করৌলির মতো শান্তিপূর্ণ অথচ ঘিঞ্জি এলাকা বেছে নিয়েছিল তারা। শোভাযাত্রার আগেই পরিকল্পিতভাবে নানারকম গুজব ছড়িয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে।"

পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনা ইচ্ছাকৃত, যাতে সহিংসতা ছড়ানো যায়, এমনটাই বলা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্ট অনুযায়ী পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনার পরই, বাজারে থাকা অসংখ্য দোকানের মধ্যে মুসলিমদের দোকানগুলি বেছে বেছে আগুন লাগানো হয়েছে। তাঁদর বাড়ি-বাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে আগুন লাগানো হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা আগুন লাগানোর জন্য প্রস্তুত ছিল এবং সাথে করে দাহ্য পদার্থও নিয়ে এসেছিল।

অন্য এলাকায় আবার কিছু হিন্দু ছোট ব্যবসায়ীদের সম্পত্তি পুড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের মাঝে পড়ে উভয় সম্প্রদায়ের নিম্নমধ্যবিত্তদেরই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। অবিলম্বে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজস্থান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সিপিআইএম। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত দোষী এবং ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেওয়ারও দাবি তুলেছে তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন CPIM ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা
Karauli Violence: উন্মত্ত জনতার হাত থেকে একাই ১৫ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন মধুলিকা সিং

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in