জেডি (ইউ)-এর বিদ্রোহী নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করলেন। বর্ষীয়ান দলীয় নেতার এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়লেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার।
পাটনার সিনহা লাইব্রেরিতে সমর্থকদের সঙ্গে দুই দিনের বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপেন্দ্র। সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক প্রেস বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সম্মেলনের সময় কুশওয়াহা আরও জানিয়েছেন, তিনি শীঘ্রই এমএলসি পদ থেকেও পদত্যাগ করবেন।
সাংবাদিকদের উপেন্দ্র বলেন, "আমি বিহার বিধান পরিষদের স্পিকারকে অনুরোধ করেছি আমাকে সময় দেওয়ার জন্য যাতে আমি তাঁর কাছে পদত্যাগপত্রটি হস্তান্তর করতে পারি। দলের প্রাথমিক সদস্যপদ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত, আমি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং জাতীয় সভাপতি লালন সিং-কে জানিয়েছি।"
কুশওয়াহাও ইঙ্গিত করেন, তিনি রাজ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর সমর্থকরা তাকে দলের নাম এবং পতাকা নির্বাচন করার ক্ষমতা দিয়েছে।
এদিন সাংবাদিকদের উপেন্দ্র বলেন, "যখন আমি আমার দল আরএলএসপিকে জেডি (ইউ) এর সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলাম, তখন দলের প্রাথমিক সময়কাল ভাল ছিল। তারপর নীতীশ কুমার তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ২০২৫ সালে তেজস্বী যাদবের কাছে হস্তান্তর করার ঘোষণা করেছেন। আমি তাকে জানিয়েছিলাম যে তাঁর এই সিদ্ধান্ত জেডি(ইউ) কে গভীরভাবে আঘাত করবে। তেজস্বী বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে জেডি(ইউ) ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি আমার পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। আমি চাই না যে জেডি(ইউ) ডুবে যাক। তবে নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই তাঁর দলকে ডুবিয়ে দিয়েছেন।"
"সমতা পার্টি এবং জেডি(ইউ) লালু প্রসাদ যাদবের 'জঙ্গলরাজ'-এর বিরোধিতা করে জন্ম নিয়েছিল। এখন, নীতীশ কুমার তাদেরই সাথে হাত মিলিয়েছেন। নীতীশ কুমারের পদক্ষেপ বিহারে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে ধ্বংস করবে। তিনি কেবলমাত্র তাকে ঘিরে থাকা দুই থেকে চার নেতার পরামর্শ শুনছেন।”
বিজেপির সাথে নিজের সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কুশওয়াহা বলেন, যে তিনি তার বড় ভাইয়ের (নীতীশ কুমার) কাছ থেকে সবকিছু শিখেছেন।
উপেন্দ্র আরও বলেন, "তিনি (নীতীশ কুমার) সন্ধ্যায় দলের জোট শরিকদের (বিজেপি) সাথে বৈঠক করেছিলেন। এক ঘন্টা পরে, তিনি আরজেডির সাথে বৈঠক করেন এবং পরের দিন সকাল ১০টায় সরকার গঠন করেন।"
গত এক মাস ধরে উপেন্দ্র কুশওয়াহা নীতিশ কুমারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব দেখিয়ে চলেছেন। ২০২৫ সালে তেজস্বী যাদবের কাছে তাঁর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হস্তান্তর করার যে ঘোষণা সম্প্রতি নীতীশ কুমার করেছেন তার পর থেকেই উপেন্দ্রর সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। এই ঘোষণার বিষয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন উপেন্দ্র কুশওয়াহা।
কুশওয়াহা দাবি করেছিলেন যে লব-কুশ হিসাবে নীতিশ কুমারের নেওয়া সিদ্ধান্তের পরে জেডি (ইউ) ধাক্কা খাবে। কারণ লব-কুশ গোষ্ঠীর মানুষ বিহারে যাদবদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী।
উপেন্দ্র কুশওয়াহা অতীতে কতবার দল বদলেছেন?
২০০৭ সাল - এই বছর প্রথমবার, উপেন্দ্র কুশওয়াহা, যিনি বিহার বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা ছিলেন, জেডিইউ-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। জেডিইউ তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে। বহিষ্কৃত হবার পর কুশওয়াহা রাষ্ট্রীয় সমতা পার্টি গঠন করেন।
২০০৯ সাল - লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পরে, উপেন্দ্র কুশওয়াহা নীতীশ কুমারের সাথে দেখা করেন। এবার তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান নীতীশ কুমার।
২০১৩ সাল - জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যে টানাপোড়েনের মাঝেই নীতীশ কুমারকে অন্ধকারে রেখে উপেন্দ্র কুশওয়াহা আবার দল ছাড়েন এবং নিজের নতুন দল রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি গঠন করেন।
২০১৪ সাল - উপেন্দ্র কুশওয়াহা বিজেপির সাথে জোট বেঁধে লোকসভার ৪টি আসনে প্রার্থী দেন এবং বিহারে ৩টি আসনে জয়ী হন। এরপর তাঁকে মোদি মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী করা হয়।
২০১৮ সাল - বর্ণ শুমারি ইত্যাদি ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে উপেন্দ্র কুশওয়াহা মোদি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর এনডিএ ছেড়ে আরজেডি-কংগ্রেসের নেতৃত্বে মহাজোটে যোগ দেন।
২০১৯ সাল - লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর উপেন্দ্র কুশওয়াহা মহাজোট ছেড়ে দেন। তিনি বিএসপি এবং আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দলকে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন করেন।
২০২০ সাল - বিহার নির্বাচনে তৃতীয় ফ্রন্ট পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল সমস্ত আসনে পরাজিত হন। এরপর তিনি তার দলকে JDU-র সঙ্গে মিশিয়ে দেন।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন