
ক্রমশ বাড়ছে উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুরের আবুনগরে নবাব আব্দুল সামাদের সমাধি নিয়ে বিরোধ। সোমবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ঈদগাহের মধ্যে থাকা সেই সমাধিস্থলে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর করা হয় স্মৃতিসৌধও। ব্যারিকেড থাকলেও পুলিশের সামনে অবাধে চলে এই ভাঙচুর। এমনকি স্মৃতিসৌধে গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাদের দাবি, এটা মকবরা নয়, ঠাকুরজীর মন্দির। ইতিমধ্যেই ১৬০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, অশান্তি হবে আগে থেকে টের পেয়েছিল তারা। সেই জন্য ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল এলাকা। কিন্তু সোমবার সেই ব্যারিকেড ভেঙেই ঢুকে পড়ে সংগঠনগুলি। ঘটনার একাধিক ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু মহাসভা, বজরং দল-সহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা পুলিশের সামনেই লাঠি-ডাণ্ডা দিয়ে ব্যারিকেড ভেঙে মকবরায় ঢুকে পড়েন। এবং অবাধে ভাঙচুর চালান। শুধু স্মৃতিসৌধ নয়, ভাঙা হচ্ছে সমাধিও। (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার)
স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই মকবরাটি ২০০ বছরের পুরানো। চারদিন আগে 'মঠ মন্দির সংঘর্ষ সমিতি' নামে এক সংগঠন জেলাশাসক রবীন্দ্র সিংকে স্মারকলিপি দেয়। জানানো হয়, ওটি মকবরা নয়, ঠাকুরজীর মন্দির। সেখান থেকে দখলদারি হঠানো হোক। ১১ আগস্ট জন্মাষ্টমী পালন করা হবে ওখানে। মনে করা হচ্ছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু মহাসভা, বজরং দলের মতো সংগঠনগুলো রয়েছে এর পিছনে।
এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ফতেপুর জেলার বিজেপি সভাপতি মুখলাল পাল। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানিয়েছিলেন, সোমবার ওই মকবরায় পুজা অর্চনা করবেন তারা। ওইদিন সকাল ৯টায় কর্পুরী ঠাকুর ডাকবাংলোতে সবাইকে সমবেত হওয়ার বার্তা দেন তিনি।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন থেকে এই বার্তা পাওয়ার পর রবিবারই এলাকা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার। মকবরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এদিন সকাল থেকে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের সামনেই অবাধে চলে ভাঙচুর বলে অভিযোগ।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু মহাসভার নেতা মনোজ ত্রিবেদী দলবল নিয়ে মকবরার ভিতরে প্রবেশ করে পুজোপাঠ করছেন। যা নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। ১০টি থানা থেকে পুলিশ আনা হয়। এরপরে পাঁচশো মিটার দূরে গিয়ে ডাকবাংলো মোড়ে অবরোধে বসে পড়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।
এই ঘটনার পর ফতেপুরের এসপি অনুপ কুমার সিং বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। গেরুয়া পতাকা খুলে ফেলা হয়েছে। ১৬০ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ১৯০ (বেআইনি সমাবেশ), ১৯১(৩) (দাঙ্গা), ৩০১ (ক্ষতি সাধন) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে ১০ জনের নাম রয়েছে এবং বাকি ১৫০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআর।
অন্যদিকে, ফতেপুর শহরের কাজী সঈদ ইসলাম আবদুল্লা মুসলিমদের শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এরা শহরের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য এই কাজ করছে। প্রশাসন তাদের কাজ করবে বলেও আশাবাদী তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন