
সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের তুলনা টানলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা PDP নেত্রী মেহবুবা মুফতি। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে হওয়া হিংসার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, "আমরা শুনছি বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ এবং আমাদের হিন্দু ভাইরা সেখানে নিপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে। ভারতেও যদি সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়, সেক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পাই না।"
রবিবার জম্মুতে এক দলীয় কর্মসূচীতে বিজেপির একদা জোটসঙ্গী পিডিপি প্রধান বলেন, "ভারত এত বড় দেশ, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। কিন্তু এখানে কয়েকশ বছরের পুরনো মসজিদের নীচে শিবলিঙ্গ খুঁজতে গিয়ে যদি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়, বা এখানের সংখ্যালঘুরা লাগাতার আক্রমণের শিকার হন তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কী?"
মুফতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন সেখানে হিন্দুদের উপর হওয়া নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, তাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। ভারতের পরিস্থিতিও আলাদা কিছু নয়। এখানেও উমর খালিদের মতো ছাত্রনেতা দীর্ঘ কয়েক বছর জেল বন্দী রয়েছেন।"
তাঁর কথায়, অধিকাংশ হিন্দুই ধর্মনিরপেক্ষ, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি তাঁদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "দেশের অবস্থা ভালো নয়। গান্ধীজি থেকে শুরু করে জওহর লাল নেহেরু, মৌলানা আব্দুল কালাম আজাদ, সর্দার প্যাটেল বা আম্বেদকর জি - এই সমস্ত নেতারা এই দেশকে হিন্দু, শিখ, মুসলমান, খ্রিস্টান সকলের জন্য একটি আবাসস্থল বানিয়েছেন। এটি সকলের বাড়ি, একটি যৌথ বাড়ি যার জন্য গান্ধীজি তাঁর জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এখন মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে। আমার ভয় লাগছে যে আমাদের ক্রমশ ১৯৪৭ সালের পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।"
মুফতি বলেন, "তরুণরা চাকরি, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও সুশিক্ষা চাইলেও পাচ্ছে না। শিক্ষা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র কারণ এটি মানুষকে উড়তে ডানা দেয়, কিন্তু সরকার তা দিচ্ছে না। আমাদের রাস্তা, গলি, লেন মেরামত করতে পারছে না। তাহলে আপনার (সরকারের) কাজ কী? আপনি কেবল মসজিদগুলো ভেঙ্গে তার নীচে মন্দিরের অনুসন্ধান করছেন।''
আজমীর শরিফের প্রসঙ্গ তুলে জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "আজমীর মাজার ৮০০ বছরের পুরনো, যেখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ সবাই যায়। এটা আমাদের ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। গঙ্গা যমুনা সংস্কৃতির প্রতীক পেতে চাইলে আজমীর শরীফে গিয়ে দেখুন আমাদের হিন্দু মা বোনেরা কিভাবে মাথা নত করেন। ভাতৃত্বের এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর নেই। এখন, আপনারা এর পিছনেও পড়েছেন। এটি খনন করছেন এবং এর নীচে একটি মন্দির খুঁজছেন। আর কতদিন এই কৌশল চালাবেন আপনারা?"
যদিও মুফতির এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। জম্মু কাশ্মীরের বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা বলেন, ভারতে সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত। মুফতি এই ইস্যুতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন