স্তনে হাত দেওয়া বা পাজামার দড়ি খুলে দেওয়া ধর্ষণের চেষ্টা নয়! বিচারপতির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ আমজনতা

People's Reporter: বিচারক বলেন, ‘’ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি আইনজীবীকে প্রমাণ দিতে হবে, ঘটনাটি ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল। অপরাধের প্রস্তুতি এবং প্রকৃত প্রচেষ্টার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।‘’
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি - সংগৃহীত
Published on

বুকে হাত দেওয়া, স্তন খামচে ধরা (Grabbing Breasts) বা পাজামার দড়ি খুলে দেওয়া ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নয়। Bar And Bench-এর প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তরপ্রদেশে এক নাবালিকার উপর হওয়া যৌন নির্যাতনের মামলায় এমনই মন্তব্য করেছে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই ধরণের ঘটনাকে যৌন হেনস্থা হিসেবে বিবেচিত করা যেতে পারে, কারণ এগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ।

এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছে আদালত। হাইকোর্ট তার আদেশে ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে "প্রস্তুতি পর্যায়" এবং "প্রকৃত প্রচেষ্টা"-এর মধ্যে পার্থক্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছে।  

২০২১ সালে উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ১১ বছর বয়সী এক নাবালিকার উপর পবন এবং আকাশ নামে দুই ব্যক্তি শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারা নাবালিকার বুকে হাত দেয়, স্তন ধরে টানে, পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দেয় এবং একটি কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। সেইসময় মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা সেখানে চলে আসায় অভিযুক্তরা চম্পট দেয়। প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, নাবালিকা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল, সেইসময় অভিযুক্তরা তাকে বাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাদের সাথে নিয়ে যায় এবং তারপর এগুলো করেছিল।

কাসগঞ্জ নিম্ন আদালতের নির্দেশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং পকসো আইনে মামলা রজু হয়। নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ইলাহাবাদ হাইকোর্টে যায় অভিযুক্তরা। হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্র বর্তমান ধারাগুলো সরিয়ে, তার পরিবর্তে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪৫-বি (হামলা অথবা বলপূর্বক বিবস্ত্র করার চেষ্টা) এবং পকসো আইনের ৯/১০ ধারায় মামলা রুজু করতে নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘’অভিযুক্ত পবন ও আকাশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ঘটনা নিয়ে যে তথ্যগুলো প্রকাশ্যে এসেছে, দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ লাগু হবে না। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি আইনজীবীকে প্রমাণ দিতে হবে যে, ঘটনাটি ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল। অপরাধের প্রস্তুতি এবং প্রকৃত প্রচেষ্টার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে।‘’

বিচারপতি মিশ্র তাঁর আদেশে বলেন, ‘’ আকাশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হল, সে নির্যাতিতাকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং তার পাজামার দড়ি খুলে দিয়েছিল। এতে প্রমাণ হয় না যে ওই ব্যক্তির ধর্ষণের অভিপ্রায় ছিল। সাক্ষীরাও তাঁদের বয়ানে বলেননি যে, নির্যাতিতা নগ্ন হয়ে পড়েছিল। অভিযুক্তরা নির্যাতিতার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেছে এমন কোনও তথ্য নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লঘু অভিযোগের জন্য সমন জারি করা যেতে পারে।‘’

বিচারপতির এই রায়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে আমজনতার মধ্যে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন, যদি এই ঘটনাগুলি (বুকে হাত দেওয়া, পাজামার দড়ি খোলা) ধর্ষণের উদ্দেশ্য প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট তথ্য না হয়ে থাকে, তাহলে যথেষ্ট তথ্য কী? বিচারক নির্বাচন নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।

সিনিয়র আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহও এই আদেশটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তুলে ধরে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।  

কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীও এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনিও বিষয়টিতে নজর দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।

প্রতীকী ছবি
ADR: দেশের সবথেকে গরীব বিধায়ক বাংলাতেই, সম্পত্তি মাত্র ১৭০০ টাকা, সবথেকে ধনী বিধায়কের সম্পত্তি কত?

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in