
২৬/১১ মুম্বাই হামলা মামলায় কাসবকে ফাঁসিতে ঝোলাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া আইনজীবী থেকে প্রাক্তন বিদেশ সচিব - রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে দেশের চার বিশিষ্টজনের নাম মনোনীত করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu)। রবিবার সকালে চার সদস্যের নাম ঘোষণা করে দিল রাইসিনা হিলস। যে চারজন রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত হয়েছেন, তাঁরা হলেন - বিশিষ্ট আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম, প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, কেরলের সমাজকর্মী তথা শিক্ষাবিদ শ্রী সদানন্দন মাস্টার এবং ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন। এই চারজনই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি ঘনিষ্ঠ।
ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮০ (১) (ক)–এর অধীনে রাজ্যসভায় ১২ জন সদস্য মনোনীত করার ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত চার সাংসদ অবসর গ্রহণ করাতেই তাঁদের শূন্যস্থান পূরণের জন্য নতুন চারজনের নাম মনোনীত করা হয়েছে। মূলত সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প এবং সমাজসেবার সঙ্গে যুক্তদের এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়। রাজনৈতিক মহলের মতে, মনোনীত চারজনের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তর ছোঁয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বই হামলায় ধৃত একমাত্র জঙ্গি অজমল আমির কসাবের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম। এই মামলায় সরকারি আইনজীবী হিসেবে আদালতে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনের অধীনে তদন্ত রিপোর্ট এবং অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করে কসাবের অপরাধ প্রমাণ করেছিলেন। শুনানিতে নিকম বারংবার সওয়াল করেছিলেন কসাব কোনও ‘বিচ্যুত যুবক’ নয়, বরং একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মুখ্য অংশ। যার ভিত্তিতে ২০১০ সালে আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন কসাব। এবং ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর ফাঁসি কার্যকর হয় তাঁর।
৭২ বছর বয়সী আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেছেন। ১৯৯৩ সালের মুম্বই ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলা হোক বা বলিউডের মিউজিক প্রোডিউসার গুলশন কুমার হত্যা মামলা অথবা প্রমোদ মহাজন হত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার আইনজীবী ছিলেন তিনি। এছাড়া ২০২৪ -এর লোকসভা নির্বাচনে মুম্বই উত্তর-মধ্য কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। যদিও কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি।
অন্যদিকে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভারতের বিদেশ সচিব ছিলেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে তাঁকে বিজেপি প্রার্থী করা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। প্রায় দু'বছর দার্জিলিংয়ে সক্রিয় ভাবে জনসংযোগের কাজ করেছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত দার্জিলিং জেলা বিজেপি ও রাজ্য বিজেপির একটি বড় অংশের চাপে রাজু বিস্তাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মোদীর আমলে আমলামহলে যাঁরা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই শ্রিংলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও রাষ্ট্রপতির মনোনয়নের তালিকায় রয়েছেন কেরলের সমাজকর্মী তথা শিক্ষাবিদ শ্রী সদানন্দন মাস্টার। ত্রিশূর জেলার প্রখ্যাত শিক্ষক ও সমাজসেবী তিনি। ১৯৯৪ সালে পেরিঞ্চেরি এলাকায় রাজনৈতিক হামলার জেরে বাদ যায় দুই পা। তারপরেও শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি। এখনও এই হামলার জন্য সিপিআইএমের দিকে আঙুল তোলা হয়। ২০২১ সালে কেরল বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হলেও জয় পাননি তিনি। সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসারে অবদানের কারণে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছে।
এই তালিকায় সবশেষে রয়েছে ইতিহাসবিদ মীনাক্ষী জৈন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মধ্যযুগ ও ঔপনিবেশিক ভারতের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার সুবাদেই এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। দিল্লির গার্গী কলেজে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন মীনাক্ষী। এরপর নেহেরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরির ফেলো হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চের সিনিয়র ফেলো হিসেবে যুক্ত। রাম ও অযোধ্যা নিয়ে বিস্তর গবেষণা রয়েছে তাঁর। ২০২০ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রীও দেওয়া হয় তাঁকে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন