
ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। যার জেরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশনীতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেছে কংগ্রেস। ভারতের বিদেশনীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেও সুর চড়িয়েছেন একাধিক কংগ্রেস নেতা।
বুধবার বিকেলেই ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই জাতীয় রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা সিনিয়র কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম মনে করেন এই শুল্ক ভারতের বাণিজ্যের জন্য ‘বিরাট ধাক্কা’।
এক্স মাধ্যমে চিদম্বরম লেখেন, “রাশিয়ান তেল কেনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমস্ত ভারতীয় রপ্তানির উপর ২৫% শুল্ক, সাথে জরিমানা ঘোষণা করেছে, যা ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের জন্য একটি বড় ধাক্কা। ‘বন্ধুত্ব’ কোনও দিন কূটনীতি আলোচনার বিকল্প হতে পারে না। WTO-র নিয়ম লঙ্ঘন করছে আমেরিকা”।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ লেখেন, “রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ভারতের উপর সবকিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন। ১০ মে থেকে তিনি ৩০ বার দাবি করেছেন যে তিনি অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করেছেন। এই দাবিগুলি চারটি ভিন্ন দেশে করা হয়েছিল। ১৮ জুন, তিনি হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এবং পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার ষড়যন্ত্রকারীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আর ৩০ জুলাই, তিনি ভারত থেকে মার্কিন আমদানির উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেন”।
মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ সুপ্রিয়া শ্রীনাতেও। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী আগেই এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। এর ফলে আমাদের অর্থনীতি, রপ্তানি, উৎপাদন এবং ফলস্বরূপ আমাদের চাকরি ও কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব পড়বে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানি করি এবং ২৫% শুল্কের ফলে এগুলো ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে, যার ফলে চাহিদা কমে যাবে আর উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমে যাবে। এটি আমাদের ব্যর্থ বিদেশ নীতির ফল”।
কংগ্রেসের অফিসিয়াল এক্স মাধ্যমে লেখা হয়, “ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন। জরিমানাও আরোপ করেছেন। অন্যদিকে, মোদী ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার করেন, 'আবকি বার ট্রাম্প সরকার'-এর মতো স্লোগান দেন, দীর্ঘদিনের হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের মতো তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। বিনিময়ে, ট্রাম্প ভারতের উপর এইরকম কঠোর শুল্ক আরোপ করলেন। এটি পররাষ্ট্রনীতির এক ভয়াবহ ব্যর্থতা। একজন ব্যক্তির 'বন্ধুত্বের' পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে গোটা দেশকে”।
প্রসঙ্গত বুধবার বিকেলে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) ভারতের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট জানা যায়, রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বের কারণেই এই শুল্ক দিতে হবে ভারতকে। যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
ট্রাম্প লেখেন, "মনে রাখবেন, ভারত আমাদের বন্ধু হলেও, আমরা বছরের পর বছর ধরে তাদের সাথে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি কারণ তাদের শুল্ক অনেক বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হারে শুল্ক নেওয়া দেশগুলির মধ্যে একটি। তাদের সঙ্গে ব্যবসায় অনেক বাধা রয়েছে, যে কোনও দেশের তুলনায় সবচেয়ে জটিল এবং বিরক্তিকর বাধা, যার সঙ্গে আর্থিক কোনও সম্পর্ক নেই।"
তিনি এও জানান, “ভারত সর্বদা তাদের সামরিক সরঞ্জামের সিংহভাগ রাশিয়া থেকে কিনেছে। রাশিয়ার জ্বালানির বৃহত্তম ক্রেতা ওরা। যখন সবাই চায় রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুক তখন রাশিয়া থেকে লাগাতার তেল কিনেছে ভারত। এই সব ভালো নয়! ভারত তাই ২৫% শুল্ক প্রদান করবে এবং উপরোক্ত বিষয়গুলোর জন্য জরিমানাও দিতে হবে ভারতকে। যা ১ আগস্ট থেকে শুরু হবে”।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন