
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা দায়ের করল মার্কিন ধনকুবের এলন মাস্ক-এর সংস্থা এক্স (পূর্বতন ট্যুইটার)। এখবর জানিয়েছে সংবাদসংস্থা পিটিআই। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে বিষয়বস্তুর নিয়ন্ত্রণ এবং স্বেচ্ছাচারী সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলে এক্স এই মামলা দায়ের করেছে। এলন মাস্কের সংস্থা সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম এক্স ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) আইনের ধারা ৭৯(৩)(বি)-এর ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এই ব্যবহার দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে লঙ্ঘন করছে এবং অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স মামলায় অভিযোগ জানিয়ে বলেছে, সরকার আইনের ৬৯-এ ধারায় নির্দেশিত বিষয়বস্তুকে এড়িয়ে সমান্তরাল কনটেন্ট ব্লকিং প্রক্রিয়া তৈরি চালাচ্ছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯(ও) ধারা অনুসারে অনলাইনের কোনও বিষয়বস্তু ব্লক করতে পারে সরকার। যদিও এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। যেমন ওই বিষয়বস্তু জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে মনে হলে তখনই পর্যালোচনার পর তা মুছে দেওয়া যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৭৯(৩)(বি) ধারা অনুসারে আদালতের আদেশ বা সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলিকে অবৈধ চিহ্নিত বিষয়বস্তু অপসারণের নির্দেশ দেয়। শুধুমাত্র সরকারি বিজ্ঞপ্তি বা আদালতের নির্দেশের মাধ্যমেই তা কার্যকরী করা যাবে।
নিয়ম অনুসারে, কোনও সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে এই নির্দেশ না মানলে আইনের ৭৯(১) ধারা অনুসারে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। আইনি রক্ষাকবচ হারাতে পারে ওই সংস্থা। যা নিয়ে এক্স-এর বক্তব্য, এই ধারা কখনই সরকারকে অনলাইন বিষয়বস্তু ব্লক করার স্বাধীনতা দেয় না। যদিও ধারার অপব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত চলতি মাসের প্রথমদিকে সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পোস্ট মুছে দেওয়ার আগে ব্যবহারকারীদের মতামত জানানো গণতান্ত্রিক নীতির অংশ হওয়া উচিত। কেন্দ্রকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এই বিষয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টারের দায়ের করা এক আবেদনের শুনানিতে এই নোটিশ দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের পোস্ট সরিয়ে ফেলার আগে তাঁদের মতামত জানানো উচিত কি না, এই সংক্রান্ত এক মামলার শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। মামলাকারীর অভিযোগ, এক্স-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো প্রায়ই অ্যাকাউন্ট মালিকদের কিছু না জানিয়েই সরকারি নির্দেশে বিভিন্ন পোস্ট মুছে ফেলে। বিষয়টি বাকস্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী বলে যুক্তি দেন আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই ঘটনার পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রায় একই অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করলো এলন মাস্কের সংস্থা এক্স।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন