
আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলায় (PMLA) অভিযুক্তদের গ্রেফতার, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা তল্লাশি চালানোর জন্য ইডিকে ছাড়পত্র দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট (The Supreme Court)। ২৭ জুলাই, এ নিয়ে একটি রায় দিয়েছে বিচারপতি এএম খানউইলকরের ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায় এমন সময় এসেছে- যখন সারাদেশে ১২২ জন প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদ-বিধায়কদের উপর তদন্ত চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)।
পিএমএলএ আইনের আওতায় ইডির ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা হয়েছিল। আবেদনকারীদের বক্তব্য ছিল, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে গ্রেফতারির কারণ না জানিয়ে গ্রেফতার করা অসাংবিধানিক। কিন্তু, আদালত বেশিরভাগ মামলা খারিজ জানিয়েছে, ইডি-র গ্রেপ্তারির পদ্ধতিটি স্বেচ্ছাচারী নয়।
আদালতের এক্ষেত্রে বক্তব্য, এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট (ইসিআইআর), ইডির অভ্যন্তরীণ নথি। প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদনের (এফআইআর) সঙ্গে তা সমান নয়। সেই কারণে, পিএমএলএর অধীনে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে ইসিআইআর সরবরাহ করা মোটেও বাধ্যতামূলক নয়।
একইসঙ্গে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০ (৩)- এর অধীনে অপরাধের বিরুদ্ধে আইনের ৫০ নম্বর ধারায় ইডি অফিসারদের বিবৃতি রেকর্ড করার বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। এই মামলায় বেঞ্চ জানিয়েছিল যে, ইডি অফিসাররা পুলিশ আধিকারিক নন। তাই ২০ (৩) ধারা তাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
অনেকেই মনে করছেন, শীর্ষ আদালতের এই রায় ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে। PMLA আইনের বিরুদ্ধে আদালতে ১০০ টির বেশি মামলা হয়। সেই মামলাগুলিতে শুনানি চলে টানা ২৩ দিন।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ইডি ন’বছরে মোট ১১২টি তল্লাশি চালিয়েছিল। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গত আট বছরে ৩,০১০টি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি।
জানা যাচ্ছে, গত ১৭ বছরে প্রায় ৫৫০০ টি আর্থিক দুর্নীতির মামলা করেছে ইডি। তবে মাত্র ২৩ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ২৬ জুলাই, সংসদে এই তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী। যার জেরে ইডির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
গত সোমবার পঙ্কজ চৌধুরী লোকসভায় বলেন, ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫৪২২ টি মামলা করেছে ইডি। সবকটি মামলা হয়েছে PMLA-র অধীনে। প্রায় ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটির আর্থিক দুর্নীতির মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৯২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল হয়। কিন্তু মাত্র ২৩ জনের থেকে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি।
বর্তমানে, ইডির নজরে রয়েছে একাধিক বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী, সাংসদ, বিধায়কেরা। এই তালিকায় মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম এবং তাঁর ছেলে কার্তি চিদাম্বরম।
অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন- জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির অজিত পাওয়ার, শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত, জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্সের (NC) ফারুক আবদুল্লাহ, আম আদমি পার্টির সত্যেন্দ্র জৈন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী নবাব মালিক, তামিলনাড়ুর আম্মা মক্কাল মুনেত্রা কাজগাম (AMMK) পার্টির শীর্ষ নেতা টিটিভি ধীনাকরণ, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধায় এবং তার স্ত্রী রুজিরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন