
এবার এনসিইআরটি’র দেশভাগ বিষয়ক পাঠক্রমের তীব্র সমালোচনা করল ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেস। ইতিহাসবিদদের অভিযোগ, "পাঠ্যক্রমে যা লেখা আছে, তাতে মিথ্যা তথ্য এবং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃতি রয়েছে। শিশুমনের মধ্যে বিকৃত ইতিহাস ঢোকানো হচ্ছে!" এমনকি এনিয়ে ইতিহাস কংগ্রেসের তরফে একটি প্রস্তাবও পাশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টি নিয়ে মহম্মদ আলি জিন্না, কংগ্রেস এবং লর্ড মাউন্টব্যাটনকে দায়ী করে একটি পরিচ্ছদ সংযোজনের উদ্দেশ্যে মডিউল প্রকাশ করা হয়েছে। ইতিহাস কংগ্রেস এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের বক্তব্য, কংগ্রেসকে দেশভাগের জন্য দায়ী করলেও, ব্রিটিশদের এই দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে মোদী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত এনসিইআরটির নতুন পাঠ্যপুস্তকে।
এনসিইআরটির মডিউলে লেখা হয়েছে, "দেশ ভাগ কেবল এক ব্যক্তির কাজ ছিল না। বরং তিনটি শক্তির সম্মলিত প্রয়াস ছিল। জিন্না, যিনি দেশভাগের লক্ষ্যে প্রচার করেছিলেন। কংগ্রেস, যারা দেশ ভাগ মেনে নিয়েছিল এবং মাউন্টব্যাটন, যাকে দেশভাগ বাস্তবায়নের জন্য পাঠানো হয়েছিল"। এই মডিউল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা বলে অভিযোগ করেছেন ইতিহাসবিদেরা। ইতিহাস কংগ্রেসের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৩৭ সালে হিন্দু মহাসভা প্রথম ভারত বিভাজনের দাবি তুলেছিল। ১৯৪০ সালে এই একই দাবি তোলে জিন্নার নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগ।
অন্যদিকে, কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে জওহরলাল নেহেরু এবং কংগ্রেসকে দায়ী করা হয়েছে এনসিইআরটির নয়া পাঠ্যপুস্তকে। লেখা হয়েছে, ‘‘দেশভাগের পরে কাশ্মীর একটি নতুন সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল, যা আগে কখনও ভারতে ছিল না।’’ এমনকি নেহেরু প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতীয় বিদেশনীতিকে 'দিশাহীন' বলে চিহ্নিত করা হয়েছে বইয়ে। এই তথ্য বিভ্রান্তিমূলক বলে দাবি ইতিহাসবিদদের।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহতেই এনসিইআরটি-র নতুন মডিউলের বিরোধিতা করে একে ‘সঙ্ঘ পরিবারের পরিকল্পনার অঙ্গ’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবনে খেরা। তিনি বলেছিলেন, "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মডিউল করা হয়েছে। হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লীগের মধ্যে যোগসাজশের কারণে দেশভাগ হয়েছিল। দেশভাগের ধারণাটি প্রথম হিন্দু মহাসভা ১৯৩৮ সালে প্রচার করেছিল। জিন্নাহ ১৯৪০ সালে এটি পুনরাবৃত্তি করেছিলেন।" তিনি এই মডিউল পুড়িয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এবার এর বিরোধিতা করল ইতিহাস কংগ্রেস।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন