Kerala: মাদক বিরোধী সচেতনতা গড়তে স্কুলে জুম্বা শেখানোর নির্দেশ কেরল সরকারের, অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক

People's Reporter: পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য যাতে ভাল থাকে, শারীরিক ভাবে তারা যাতে চাঙ্গা থাকে, স্কুলে আসতে উৎসাহ পায়, হাসিখুশি থাকে, তার জন্য স্কুলগুলিতে জুম্বা নাচ চালু করেছে কেরালার শিক্ষা দপ্তর।
স্কুলের পোশাকেই কেরালার স্কুলে জুম্বা ক্লাস
স্কুলের পোশাকেই কেরালার স্কুলে জুম্বা ক্লাসছবি - সংগৃহীত
Published on

পড়াশোনার চাপ, ভুল সঙ্গদোষ, পরিবারের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ না থাকা ইত্যাদি নানা কারণে বর্তমানে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন অল্পবয়সীরা। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদক বিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে স্কুলগুলিতে জুম্বা শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেরালা সরকার। এখানে সকল পড়ুয়ার অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক বলেও জানিয়েছে সরকার।

কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়তে কেরল সরকারকে। সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির দাবি, 'স্বল্প পোশাক'-এ ছেলেমেয়েরা একসাথে নাচ গান করবে, তা মেনে নেওয়া যায়না। যদিও এই পরিস্থিতিতেও এই নির্দেশে অনড় বাম সরকার। এই নিয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী।

পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্য যাতে ভাল থাকে, শারীরিক ভাবে তারা যাতে চাঙ্গা থাকে, স্কুলে আসতে উৎসাহ পায়, হাসিখুশি থাকে, তার জন্য স্কুলগুলিতে জুম্বা নাচ চালু করেছে কেরালার শিক্ষা দপ্তর। চলতি শিক্ষাবর্ষেই বিভিন্ন স্কুলে চালু হয়েছে জুম্বা ক্লাস। একেবারে শেষ পিরিয়ডে চলে এই ক্লাস। যা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আর সরকারের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি কিছু সংখ্যালঘু সংগঠনের। সংগঠনের দাবি, রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এর ফলে খর্ব হচ্ছে মৌলিক অধিকার। উইসডম ইসলামিক অর্গানাইজেশনের জেনারেল সেক্রেটারি টিকে আশরফ জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে এই ক্লাসে অংশ নেবেন না। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, "এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমার ছেলে এতে অংশ নেবে না"।

অন্যদিকে, রাজ্যের প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠন Samastha-র নেতা নাসের ফইজি কুডাথায় জানিয়েছেন, শরীরচর্চার নামে অশ্লীলতার পাঠ দেওয়া হচ্ছে স্কুলে। তিনি বলেন, "স্কুলে জুম্বা ক্লাস চালু করেছে কেরালা সরকার। জুম্বা আসলে এক ধরনের নাচ, যাতে স্বল্পবসন পরে যোগ দিতে হয়। বড় বড় ছেলেমেয়েদেরও যদি সরকার এই নির্দেশ দিয়ে থাকে, তা অত্যন্ত অপত্তিজনক। শরীরচর্চার যে রীতি রয়েছে, তার উন্নতি করা উচিত। এভাবে অশ্লীলতা চাপিয়ে দেবেন না। এতে ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকারও খর্ব হয়"।

যদিও জুম্বা ক্লাস নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ডি শিবনকুট্টি দাবি, সরকারের এই পদক্ষেপ ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। সমাজ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। যেখানে জুম্বা ক্লাসে মুসলিমদের অংশ নিতে দেখা গেছে। তবে স্বল্পবসনে নয়, স্কুলের পোশাকেই। শিবনকুট্টি লিখেছেন, "শিশুদের খেলতে দিন, মজা করতে দিন, সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠতে দিন"। শিক্ষামন্ত্রী যে ভিডিও পোস্ট করেছেন, সেটি কাসারাগড়ের Thanbeehul Islam Higher Secondary School-এর।

জুম্বা ক্লাস নিয়ে সংখ্যালঘুদের আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি জানান, "শিশুদের মোটেই স্বল্পবসন পরতে বলা হয়নি। স্কুলের পোশাক পরেই এই ক্লাসে যোগ দিচ্ছে তারা"। শিক্ষার অধিকার আইনে সরকার নির্দেশিত যে কোনও শিক্ষা প্রক্রিয়ায় পড়ুয়াদের যোগদান বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধ, "মাদক বিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে এই ধরনের ক্লাস হচ্ছে। মানুষকে এটা বুঝতে হবে। এভাবে আপত্তি জানালে সমাজে বিষ ঢুকবে। সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দেবে, শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে না"।

তবে সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে কোনও বিরোধিতা না করলেও, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভি ডি সতীসন বলেন, জুম্বা ক্লাস নিয়ে বিতর্কে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। তাঁর দাবি, "এ ধরণের বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যারা পছন্দ করে তারা করুক, যাদের পছন্দ নয়, তাদের প্রয়োজন নেই। যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে সরকারের এটি নিয়ে আলোচনা করে সমাধান বের করা উচিত"।

অন্যদিকে, যুব কংগ্রেস নেতা এবং পালাক্কাড়ের বিধায়ক রাহুল মামকুটাথিল সরকারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করে বলেন, "স্কুল স্তর থেকেই শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা প্রদান করা উচিত"।

এই জুম্বা ক্লাস বিতর্ক নিয়ে সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক এম বেবি বলেন, "১৮০টির বেশি দেশে এই নাচের প্রচলন রয়েছে। মানসিক সচেতনতা, শারীরিক সক্রিয়তা অত্যন্ত জরুরি। সমালোচনার মধ্যে কোনও সত্যতা নেই। আমি কিছু ভিডিও দেখেছি, জামাকাপড় পরেই অংশ নিয়েছেন সকলে। শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার জায়গা নেই"।

যদিও জুম্বা ক্লাস নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও, কেরালা সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে চালু রয়েছে জুম্বা ক্লাস।

স্কুলের পোশাকেই কেরালার স্কুলে জুম্বা ক্লাস
Telangana: নতুন সভাপতি নিয়ে গোঁসা, দল ছাড়ছেন গোসামহলের বিতর্কিত বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিং

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in