

অধ্যক্ষের দফতরের ভিতরেই কলেজের অধ্যাপক সুজিত কুমারকে থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (DUSU) যুগ্ম সম্পাদক দীপিকা ঝা সহ অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে ড. ভীমরাও আম্বেদকর কলেজে। অভিযোগ, ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (ABVP) কয়েকজন সদস্য। যারা তাঁকে ঘিরে রেখেছিল। ঘটনার সময় কক্ষে উপস্থিত ছিলেন দিল্লি পুলিশের কয়েকজন সদস্যও।
অধ্যাপক সুজিত কুমারের দাবি, কলেজে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া NSUI ও ABVP সমর্থক ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তিনি বলেন, “দু’দিন আগে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে কলেজ ছাত্র সংসদের নবনির্বাচিত সভাপতি, যিনি NSUI সদস্য, তাঁকে মারধর করা হয়। আমি হস্তক্ষেপ করলে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। কিন্তু পরদিন বৈঠকে আমায় পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়।”
সুজিত কুমার জানান, “অধ্যক্ষের ঘরে আমায় জোর করে পদত্যাগ করানো হয়। এরপর দীপিকা ঝা এসে আমাকে চড় মারে। সেই দৃশ্য ভিডিওতেও ধরা পড়েছে।”
এই ঘটনায় ৩২ সেকেন্ডের এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি পিপলস রিপোর্টার। ভিডিওতে দেখা গেছে, অধ্যাপক কুমার সোফায় বসে আছেন, পাশে দীপিকা ঝা। ঘরে আরও কয়েকজন ছিলেন। উত্তপ্ত বাগ্বিতণ্ডার মাঝেই হঠাৎ দীপিকা উঠে দাঁড়িয়ে কুমারকে থাপ্পড় মারেন। উপস্থিত এক মহিলা পুলিশ কর্মী তখন তাঁকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বসান। অধ্যাপক উঠে দাঁড়াতে গেলে এক ব্যক্তি তাঁকে আবার ঠেলে বসিয়ে দেন। ভিডিওতে কয়েকজন পুলিশ কর্মীকেও দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এক সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, “ভিডিওটি তদন্তকারীরা দেখেছেন। সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে।”
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার কলেজ ছাত্র সংসদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এই অশান্তির সূত্রপাত। শেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (NSUI)-র এক প্রার্থী সভাপতি পদে জয়ী হলেও বাকি তিনটি পদে জয়ী হয় ABVP সমর্থিত প্রার্থীরা। অভিযোগ, অনুষ্ঠানের সময় আগেই বরখাস্ত হওয়া এক ABVP সদস্য মঞ্চে উঠে NSUI সভাপতিকে মারধর করে।
অন্যদিকে, দীপিকা ঝা স্বীকার করেছেন যে তিনি অধ্যাপককে চড় মেরেছেন, তবে তাঁর দাবি, অধ্যাপক তাঁকে “অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল” করেন এবং “অশোভন আচরণ” করেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি শুধু তাঁকে বলেছিলাম, প্রকাশ্যে ধূমপান ছাত্রদের কাছে খারাপ উদাহরণ তৈরি করে। তখনই তিনি আমার সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করেন এবং গালাগাল করেন। আমি উত্তেজিত হয়ে চড় মেরে ফেলি, যা ঠিক হয়নি।”
অধ্যাপক কুমার অবশ্য দীপিকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “ওই বৈঠকে ABVP সদস্যরা বিনা অনুমতিতে ঢুকে পড়ে। এর আগেও তাঁরা এক NSUI ছাত্রকে মারধর করেছিল, যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে আমি তিনজনকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বরখাস্ত করেছিলাম। সেই ছাত্রকেই আবার বুধবার প্রকাশ্যে আক্রমণ করা হয়।”
এ ঘটনায় ইতিমধ্যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (DUTA) উপাচার্যকে চিঠি লিখে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন