

শক্তি বাড়িয়ে ক্রমশ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা' (Cyclone Montha)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অন্ধ্রের মছলিপত্তনম এবং কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে কাকিনাড়া উপকূলের কাছাকাছি কোথাও আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। বর্তমানে এটি ঘণ্টায় প্রায় ১৫–১৭ কিলোমিটার বেগে উত্তর ও উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
মৌসম ভবনের শেষ বুলেটিন অনুসারে, মোন্থা মঙ্গলবার ভোরে মছলিপত্তনম থেকে ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে, বিশাখাপত্তনম থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কাকিনাড়া থেকে ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে এবং ওড়িশার গোপালপুর থেকে ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
মঙ্গলবার সকালেই এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এদিন সন্ধ্যাতে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার কথা। ল্যান্ডফলের সময় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকায়। গোটা উপকূলবর্তী এলাকায় জারি রয়েছে সতর্কতা। উপকূলে মোতায়েন রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এমনকি রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দলও মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ এবং জলের পরিষেবা যাতে অবিচ্ছিন্ন থাকে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে অন্ধ্র প্রশাসন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের জেরে মঙ্গল এবং বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া, রাজামুন্দ্রে, কাকিনাড়া, বিশাখাপত্তনম এবং ভীমবরম হয়ে চলাচল করা ৬৫ টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী আবহাওয়ার উপর বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজ্যের ১৯টি জেলায় ঝড়বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যে অঞ্চলে আছড়ে পড়বে তার মধ্যেই রয়েছে বিশাখাপত্তনম। আগাম সতর্কতা হিসেবে বিশাখাপত্তনম, পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী এবং কোনাসিমা জেলার ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলি থেকে সরানো হয়েছে বহু পরিবারকে। দূর্যোগের আগাম সতর্কতা হিসেবে মঙ্গলবার বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দর থেকে ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সমস্ত বিমান বাতিল রাখা হয়েছে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে সোমবারই ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন। খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। জরুরী পরিষেবায় জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এমনকি রাজ্যের মানুষজনকে পাহাড়ি এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কোনাসিমার নিচু অংশ থেকে সরানো হচ্ছে মানুষজনকে। পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু।
এদিকে তামিলনাড়ু উপকূলে ইতিমধ্যেই ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। চেন্নাই–সহ দক্ষিণ উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন জানিয়েছেন, “সমস্ত প্রশাসনিক দফতর প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তেলঙ্গানার আদিলাবাদ, পেডাপল্লি–সহ একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কর্ণাটকের উপকূলবর্তী অঞ্চল উদুপি ও কন্নড় জেলাতেও জারি হয়েছে বৃষ্টির সতর্কতা। দক্ষিণ–মধ্য রেল বাতিল করেছে বেশ কিছু ট্রেন।
বৃষ্টি শুরু হয়েছে ওড়িশার গজপতি, গঞ্জাম, পুরী ও খুরদা জেলাতেও। আটটি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দল। চিলকা হ্রদে নৌকা চলাচল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গঞ্জাম জেলায় তৈরি রাখা হয়েছে ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র।
ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে অন্ধ্র উপকূল থেকে আসা প্রায় ৩০টি মাছ ধরার নৌকা আশ্রয় নিয়েছে ওড়িশার গোপালপুর বন্দরে। স্থানীয় প্রশাসন ওই মৎস্যজীবীদেরও নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গেও বৃষ্টি শুরু হবে। মঙ্গলবার কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বৃষ্টির পাশাপাশি ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।
বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে। বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলায়। শুক্রবারও বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন
