

জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে আদালতকে অবশ্যই সবসময় পুরোভাগে থাকতে হবে। কৌতুক শিল্পী কুণাল কামরার ঘটনার মাঝেই কংগ্রেস সাংসদের বিরুদ্ধে করা এক মামলার শুনানিতে এমনই মন্তব্য করলো সুপ্রিম কোর্ট।
সম্প্রতি নিজের ইন্সটাগ্রামে “অ্যায় খুন কে প্যায়াসে বাত সুনো" শিরোনামের একটি কবিতা পোস্ট করেন কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ি। সাংসদের দাবি, কবিতাটি বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ বা হাবিব জালিব লিখেছেন। তাঁর এই পোস্টের বিরুদ্ধে গত ৩ জানুয়ারি এফআইআর দায়ের করে গুজরাটের জামনগর থানা। এক আইনজীবীর ক্লার্কের অভিযোগের ভিত্তিতে এই এফআইআর দায়ের হয়। অভিযোগকারী জানিয়েছেন, সাংসদের এই পোস্ট অস্থিরতা উস্কে দিয়েছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে।
এই এফআইআর বাতিলের দাবিতে গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মিঃ প্রতাপগড়ি। কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়। উল্টে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণ না করার জন্য তাঁর সমালোচনাও করে।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস সাংসদ। শুক্রবার বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই কংগ্রেস সাংসদের বিরুদ্ধে থাকা এফআইআর খারিজের নির্দেশ দেয় বেঞ্চ।
বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ইমরান প্রতাপগড়ি কোনও অপরাধ করেননি। বরং গুজরাট পুলিশ যেভাবে অতি উৎসাহ নিয়ে এই বিষয়ে এফআইআর দায়ের করেছে তার তীব্র সমালোচনা করেছে আদালত। আদালতের কথায়, এটা নিন্দনীয়।
বেঞ্চ বলে, “চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির স্বাধীন প্রকাশ একটি সুস্থ সভ্য সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছাড়া সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে নিশ্চিত মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করা অসম্ভব। একটি সুস্থ গণতন্ত্রে, ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে, দমন পীড়নের সাহায্যে নয়। কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র, স্ট্যান্ড-আপ কমেডি, স্যাটায়ার সাহিত্য জীবনকে সমৃদ্ধ করে।“
সুপ্রিম কোর্ট এই মন্তব্য এমন সময় করেছে যখন কৌতুক শিল্পী কুণাল কামরার একটি প্যারোডি নিয়ে উত্তাল দেশ। প্যারোডিতে নাম না নিয়ে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের অঙ্গভঙ্গি, তাঁর রাজনৈতিক জীবন বর্ণনা করছেন তিনি। এক জায়গায় শিন্ডেকে 'গদ্দার' বলেও উল্লেখ করেন তিনি। আর সেই ভিডিও সামনে আসার পর থেকেই কুণালের বিরুদ্ধে সরব হন শিবসেনা সমর্থকেরা। ভাঙচুর করা হয় স্টুডিও-হোটেল। কুণালের বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআর দায়ের হয়। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ কৌতুক শিল্পীকে ক্ষমা চাইতে বলেন। তবে কুণাল জানিয়েছেন ক্ষমা তিনি চাইবেন না।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন