
বরযাত্রী মাত্র ১৫০ জন নিয়ে যাবো, কিন্তু পণের টাকা কিছুতেই ১৫ লক্ষের কম নেব না। বিয়ের আগে থেকেই এই টানাপোড়েন চলার পর অবশেষে বিয়ে হয় এবং যে বিয়ের পরিসমাপ্তি কনের মৃত্যুতে। যদিও মৃতা মধু সিং-এর পরিবারের অভিযোগ, তাদের মেয়েকে পণের জন্য লাগাতার অত্যাচার করা হত এবং অবশেষে হত্যা করা হয়েছে। মধু সিংকে (৩২) গত ৪ জুলাই তাদের লখনৌর বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুসারে তাঁর মৃত্যুর কারণও একই। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে মধু সিং-এর স্বামী অনুরাগ সিং-কে।
এই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয় মধু এবং অনুরাগ সিং-এর। এক ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট থেকে এই বিয়ের সম্বন্ধ হয়। অনুরাগ সিং হংকং-এর এক জাহাজ কোম্পানির সেকেন্ড অফিসার। যিনি বিয়েতে ১৫ লক্ষ টাকা পণ চান। মধুর পরিবারের অভিযোগ, এই পণের জন্য বিয়ের আগে থেকেই তিনি রীতিমত চাপ দিতে থাকেন মেয়ের বাড়ির ওপর। যদিও মধুর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় কোনোভাবেই তারা ৫ লাখ টাকার বেশি দিতে পারবেন না।
বিয়ের পর থেকে থেকেই পণের বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে অনুরাগ এবং প্রথমবার এ বছরের হোলির দিল মধুকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে অনুরাগ। মধু বাপের বাড়ি ফিরে আসে। এরপর মধুর বাবা ফতে বাহাদুর সিং পণের টাকা জোগাড় করে অনুরাগকে দিলে সে মধুকে নিয়ে যায়। যদিও মধুর ওপর অত্যাচার চলতেই থাকে।
মধুর পরিবারের অভিযোগ, অনুরাগ সিং-এর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল এবং মধুর মৃত্যুর চার দিন আগে জুলাই মাসের ৩১ তারিখ অনুরাগ এক হোটেলে সেই মহিলার সঙ্গে রাত কাটায়। মধুর পরিবারের পক্ষ থেকে সেই হোটেল বুকিং-এর যাবতীয় তথ্য পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। মধুর বোন প্রিয়া জানিয়েছে, ওই মহিলার সঙ্গে অনুরাগের চ্যাট মধু দেখে ফেলে এবং তা তাকে পাঠায়।
প্রিয়ার বক্তব্য অনুসারে, বিয়ের পর থেকে অনুরাগ মধুকে কারোর সঙ্গে দেখা করতে দিত না। এমনকি মধু বাপের বাড়ির কাউকে বা কোনও বন্ধুকে ফোনও করতে পারতো না। অনুরাগ যখন বাড়ি থাকতো না তখন মধু ফোন করতো। যদিও অনুরাগ ফিরে এসেই মধুর ফোন চেক করত এবং বিনা কারণেই যখন তখন মধুকে মারধোর করত। প্রিয়া পুলিশের কাছে মধুর এক অডিও টেপও জমা দিয়েছে, যেখানে মধুকে বলতে শোনা গেছে, অনুরাগ মদ খাবার সময় তাঁর সামনে ঠিকমত বোতল না রাখার কারণে মধুকে বেধড়ক মারধোর করে অনুরাগ।
যদিও এই সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে অনুরাগ। তাঁর দাবি, মধু আত্মহত্যা করেছে। যদিও মধুর পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার ঘণ্টা পাঁচেক পরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মধুর পরিবারের সদস্যদের মধুর মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
পুলিশ সূত্র অনুসারে, ওইদিন সকাল সাড়ে দশটায় অনলাইনে খাবার অর্ডার করে অনুরাগ এবং বাড়ির কাজের লোককে কাজে আসতে বারণ করে। যদিও কাজের লোক সেই মেসেজ না দেখে কাজে চলে আসে এবং বারবার বেল বাজালেও ওইদিন কেউ দরজা খোলেনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন