'অত্যন্ত মর্মান্তিক'! পড়ুয়াদের আত্মহত্যা রুখতে ১৫ দফা নির্দেশিকা সুপ্রিম কোর্টের

People's Reporter: দেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার, প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি এবং হোস্টেলের জন্য এই নির্দেশিকা জারি করেছে।
সুপ্রীম কোর্ট
সুপ্রীম কোর্টফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

সম্প্রতি দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা রুখতে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত -সহ ১৫ দফায় নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ দেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার, প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি এবং হোস্টেলের জন্য এই নির্দেশিকা জারি করেছে।

২০২৩ সালে ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে ১৭ বছরের এক নিট পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। ছাত্রীটি বিশাখাপত্তনমের একটি কোচিং সেন্টারে মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের আবেদন জানিয়েছে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ছাত্রীর বাবা। কিন্তু আবেদন খারিজ করে দেওয় অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট। এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার ছিল সেই মামলার শুনানি। শুনানিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যা রুখতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, শিক্ষাগত চাপ, পরীক্ষার চাপ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাবে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। আদালতের জারি করা নির্দেশিকাগুলি সমস্ত শিক্ষাক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ, কার্যকরী অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা এবং নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধানের মতো ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশিকাগুলি আনুষ্ঠানিক আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের আইন হিসেবে গণ্য করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

দুই বিচারপতির বেঞ্চের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী,

১। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া রয়েছে, সেখানে কমপক্ষে একজন মনোবিদ, কাউন্সিলর অথবা সমাজকর্মী নিয়োগ করতে হবে।

২। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক -সহ সকল কর্মীদের কমপক্ষে মাসে দু'বার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

৩। প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে তাদের কর্মীরা সংবেদনশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে দুর্বল ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি বৈষম্যহীন পদ্ধতি বজায় রাখে।

৪। এছাড়া যৌন হেনস্থা, র‍্যাগিং এবং অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কিত সমস্ত অভিযোগ পরিচালনার জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের মানসিক-সামাজিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে অভ্যন্তরীণ কমিটি বা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৫। আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইন নম্বর ক্যাম্পাস, হোস্টেল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলিতে আপলোড করতে হবে।

৬। বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ, শিক্ষাগত চাপ এবং সহায়তার অভাব থেকে রক্ষা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

৭। ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা, ইমোশনাল রেগুলেশন ও জীবনদক্ষতা বিষয়ক কার্যক্রম নিয়মিত করতে হবে। অভিভাবকদের জন্য সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি কর্মসূচি চালু করতে হবে।

৮। আবাসিক হোস্টেলগুলিকে অবশ্যই টেম্পার-প্রুফ সিলিং ফ্যান ইনস্টল করতে হবে এবং ছাদ, বারান্দায় প্রবেশাধিকার সীমিত করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতে তরুণ সমাজের মধ্যে হতাশা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কাঠামোগত অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (NCRB) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতে ১,৭০,৯২৪টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ১৩,০৪৪ শিক্ষার্থী রয়েছেন। ২০০১ সালে যে পরিসংখ্যানটা ছিল ৫,৪২৫ টি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন আত্মহত্যার মধ্যে ৮ জন শিক্ষার্থী। এনসিআরবি জানিয়েছে, পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণে ২,২৪৮ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in