
কাশ্মীরের ট্যুরিস্ট গাইড নাজাকত আহমেদ শাহ-র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাঁই। রবিবার তিনি সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, কিছু মানুষের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের সমালোচনা হচ্ছে, কিন্তু সেখানে নাজাকত আহমেদ শাহ-র মত মানুষজনও আছেন, যারা পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন। উল্লেখ্য, পহেলগাঁও জঙ্গী হামলায় এই নাজাকত আহমেদ শাহ-র ভাই আদিল হুসেন শাহ সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি তীব্রভাবে পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা জানাই। যেভাবে তারা ছুটি কাটাতে যাওয়া নিরাপরাধ এবং নিরস্ত্র মানুষজনকে হত্যা করেছে তা কাপুরুষোচিত। দেশ ওই ঘটনায় ২৬ জনকে হারিয়েছে। ছত্তিশগড়ও তার সন্তানকে হারিয়েছে।… প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিশ্চই এর উচিত জবাব দেবেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে কাশ্মীরের ট্যুরিস্ট গাইড প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সমস্ত মুসলিমই খারাপ এটা কখনোই বলা যাবেনা। তাদের মধ্যেও অনেক ভালো মানুষ আছেন। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য সমস্ত সম্প্রদায়ের বদনাম হচ্ছে। ছত্তিশগড়ের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আমি নাজাকত আহমেদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই
পহেলগাঁওতে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসবাদীদের হামলা চলার সময় ছত্তিশগড়ের পর্যটকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যান স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড নাজাকত আহমেদ শাহ। জানা গেছে, ওইদিন তিন শিশু সহ মোট এগারো জন ছত্তিশগড়ের পর্যটককে হামলার সময় নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গেছিলেন নাজাকত।
এই পর্যটকরা সকলেই ছত্তিশগড়ের ভরতপুর জেলার মানেন্দ্রগড় চিড়িমিড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা। বৈসরণ উপত্যকায় যখন সন্ত্রাসবাদীদের হামলা হয় সেই সময় এরা সকলেই সেখানে ছিলেন। যেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যান নাজাকত আহমেদ শাহ। তিনি দুটি বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়ে ওই অঞ্চল থেকে দৌড়তে শুরু করেন এবং বাকিদের পথ দেখিয়ে হামলার জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে যান।
এই পর্যটকদের দলে ছিলেন ছত্তিশগড়ের স্থানীয় বিজেপি যুব মোর্চা নেতা অরবিন্দ এস আগরওয়াল, কুলদীপ স্থাপক, শিবাংশ জৈন এবং হ্যাপি ওয়াধা। এঁদের সঙ্গে নাজাকতের আলাপ শাল বিক্রির সূত্রে। বছরের অন্য সময় ট্যুরিস্ট গাইডের কাজ করা নাজাকত শীতকালে চিড়িমিড়িতে শাল বিক্রি করতে আসেন। সেখান থেকেই তাঁদের আলাপ।
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ফেরার পরেই নাজাকত আহমেদের কথা জানিয়েছিলেন ছত্তিশগড়ের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা অরবিন্দ আগরওয়াল। তিনি জানান, বৈসরণে সন্ত্রাসবাদী হামলার সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের রক্ষা করেন নাজাকাত। যে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন নাজাকতের দাদা। জঙ্গীদের আটকাতে গেলে তাঁকেও গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় জঙ্গীরা।
২২ এপ্রিল জঙ্গিদের হামলা শুরু হতেই অরবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে কয়েকজন পর্যটক আগেভাগেই নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেন। ঘটনাস্থলেই রয়ে যান তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। নাজাকত ওখানেই ছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলেন এবং আমার মেয়ে ও আমার বন্ধুর ছেলেকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেন। যতক্ষণ গুলি চলে, মাটিতে মিশে জাপটে ধরে রাখেন ওদের। তাতেই ওরা প্রাণে বেঁচে যায়। পরে তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায় নাজাকত আহমেদ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন