সংখ্যালঘুদের জন্য বরাদ্দ স্কলারশিপ বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের! প্রতিবাদে সরব শিক্ষাবিদ, পড়ুয়ারা

সমাজের বিশিষ্ট মহলের মতে, MANF বাতিলের ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত দরিদ্র, মেধাবী পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফাইল ছবি
Published on

সাচার কমিটির সুপারিশ মেনে, ২০০৯ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রদের জন্য মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ (MANF) চালু করেছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সরকার। কিন্তু, চলতি শিক্ষাবর্ষে তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA সরকার। যার জেরে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন দেশের শিক্ষাবিদ থেকে ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অবৈধ। এটা প্রত্যাহার না করলে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে।

গত বৃহস্পতিবার সংসদে MANF বন্ধের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে শিক্ষাবিদ সহ পড়ুয়ারা জানান, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ সংখ্যালঘু বিরোধী। এটা আসলে বিজেপির নিজস্ব কর্মসূচী রূপায়ণের অন্যতম প্রক্রিয়া। বিজেপি যে দেশের কৃতি সন্তানদের সম্মান জানাতেও জানে না, তা আবার প্রমাণিত।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মৌলানা আজাদের পরিবার। তাঁদের মতে, বিজেপি সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভূমিকাকে অস্বীকার করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মৌলানা আজাদের নাতনি হাসনারা সালিমের অভিযোগ, ২০১৪ সালে কেন্দ্রের মসনদে বসার পর থেকেই বিজেপি নানা ভাবে মৌলানা আজাদকে অপদস্ত করে চলেছে। গত বছরই ICCR-র অনুষ্ঠানে তাঁর মূর্তি সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর বইগুলি পরিবারের সদস্যরা দান করেছিলেন, সেগুলিও ধুলোয় ফেলে রাখা হয়েছে। অথচ আজাদ ছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানেরই সদস্য। MANF বাতিলের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজের গর্জে ওঠা প্রয়োজন। কারণ, এই পদক্ষেপের সাথে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ জড়িত।

সমাজের বিশিষ্ট মহলের দাবি, MANF বাতিলের ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত দরিদ্র, মেধাবী পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুখদেও থোরাট একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষায় মুসলিমদের তালিকাভুক্তি অত্যন্ত কম, মাত্র ১৬%। সমস্ত সম্প্রদায় মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় তালিকাভুক্তির জাতীয় গড় ২৬.৩%। এরপরেও যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের বৃত্তি কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে প্রবেশই করতে পারবেন না।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের কথায়, কেবলমাত্র মৌলানা আজাদকেই নয়, দেশের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীকেই অসম্মান করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ভীতিজনক পদক্ষেপ, মৌলানা আজাদের নামাঙ্কিত ফেলোশিপ তুলে নিল কেন্দ্র। যিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর আমলেই দেশের নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে। সেই তালিকায় দেশের আইআইটি (খড়গপুর)-র মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সঙ্গীত নাটক আকাদেমিও আছে।

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সূরয বাহাদূর থাপার মতে, সরকার ত্রুটি বিচ্যুতিগুলি ঠিক না করে ফেলোশিপই তুলে দিল, এটা সত্যি দুঃখজনক।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি নন্দিতা নারায়ণের অভিযোগ, এটা আসলে বিজেপির 'শিক্ষাবিরোধী', 'মুসলিমবিরোধী' মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের ফেলোশিপ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখনই কেন্দ্র তা বন্ধ করে দিল!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
MANF: 'মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ' বন্ধ করছে কেন্দ্র: সংসদে স্মৃতি ইরানি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
Bilkis Bano Case: ১১ জন ধর্ষকের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ! বিলকিসের আবেদন গৃহীত সুপ্রিম কোর্টে

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in